ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ নাকাল: জিএম কাদের

ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ নাকাল: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ নাকাল। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারে না সরকার। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনও করতে পারছে না। কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রপ্তানিশিল্প। টাকার অভাবে মানুষ বাজার করতে পারছে না। বাজারে যেন আগুন লেগেছে। এ আগুনে পুড়ছে কোটি কোটি পরিবার। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে জ্বলছে। শনিবার ঢাকার উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের আরও বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনই প্রমাণ করে, কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকার ও সরকারি দলকে খুশি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছে। ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির জন্য আমরা নির্বাচন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আবারও দাবি করছি, নতুন তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোনো জালিয়াতির নির্বাচন আমরা মেনে নেব না। আমরা মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।

জিএম কাদের আরও বলেন, শুরু থেকে আমরা ইভিএম-এ নির্বাচনের বিরোধিতা করছি। কারণ ইভিএমে ঘোষিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব নয়। কোনো প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হলে কোনো প্রমাণ নিয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আবার যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন সেই মাঠ প্রশাসন সরকারের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের দোষ না থাকলেও যারা ইভিএম পরিচালনা করেন তারা তো নিরপেক্ষ নন। তাই কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী সহ্য করতে পারে না। প্রতিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চায় সরকারের লোকেরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে হামলা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হতে হয়।

জিএম কাদের বলেন, বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সরকার ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। মানুষের আয় বাড়েনি। কিন্তু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। শিশুখাদ্য কিনতে পারছে না অভিভাবকরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম পুষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হবে। মানুষ বাজার করতে পারছে না। বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে কোটি কোটি পরিবার। টাকার অভাবে মানুষ চিকিৎসা করতেও পারছে না। ওষুধ কিনতে পারছে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যারা সরকারি দল করেন শুধু তারাই যেন বেহেস্তে আছেন। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে জ্বলছে। আর একটি অংশ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করছে। এক বছরে শুধু সুইস ব্যাংকে চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, সেখানে শুধু লুটপাটের জন্যই মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা লুটপাট। উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। একটি প্রকল্পও সময়মতো শেষ হচ্ছে না। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ের পরিমাণও।

উত্তরখান থানা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আলালের সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদের এমপি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান লিপটন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিন্টু প্রমুখ বক্তব্য দেন।