ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষা বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আগামী পঞ্চাশ বছরে বাংলা ভাষা কেবল জনসংখ্যার হিসেবেই নয় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ব্যবহারের দিক থেকেও বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার প্রয়োগ সহজতর করতে ইতোমধ্যে সরকার ১৫৯ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি টুলস উন্নয়নসহ প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে কাজ করছে। মন্ত্রী প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যববহারকে আরও এগিয়ে নিতে বাংলায় গুণগত কনটেন্ট এবং সকল মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মুদ্রণ প্রযুক্তিতে রোমান হরফ থেকে বাংলা হরফ ৩২৪ বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে গত এক দশকে পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিশালী ভাষার সমান্তরালে প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে বলেন, বাংলা পৃথিবীর অন্য দশটা ভাষার মতো সাধারণ ভাষা নয়। বাংলা ভাষার শক্তি অনেক সুদৃঢ়। বিশ্বের কোনো ভাষারই এমন কোনো উচ্চারণ নেই যা বাংলা হরফ দিয়ে লেখা যায় না। মোস্তফা জব্বার বলেন, ইংরেজি বর্ণমালা একটি দুর্বর বর্ণমালা। এতে বহু উচ্চারণ প্রকাশ করার বর্ণ নেই। আরবিতেও অনেক উচ্চারণ লেখা যায় না। এমনকি চীনা ভাষায় হাজার হাজার বর্ণ থাকার পরও ‘ল’ লেখা যায় না।
মন্ত্রী বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে বলেন, অপটিমা মুনির টাইপ রাইটার চালুর মধ্য দিয়ে তিনি প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার অভিযাত্রা শুরু করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের আগে ডিজিটাল যন্ত্রে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা লেখার কোনো উপায়ই ছিল না। এই সফটওয়্যারে শীশার টাইটের ৪৫৪ বর্ণকে মাত্র ২৬টি বোতামে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে মেকিন্টোস কম্পিউটারে এসেম্বলী ভাষায় বাংলা সফটওয়্যারের প্রোগ্রামিং করার লোক ছিল না দেশে। ভারতের দেবেন্দ্র যোশিকে দিয়ে একটি বাংলা সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটারে বিজ মানসম্মত বাংলা ব্যবহারের যাত্রা শুরু করে।
১৯৯৩ সালের মধ্যে দেশের প্রায় সব পত্রিকা এবং বইসহ বিভিন্ন প্রকাশনা বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকাশনা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয় বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত।
মন্ত্রী কম্পিউটার প্রযুক্তিতে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার মতো বাংলা লিখনের এই সুযোগটির জন্য এ্যাপল কম্পিউটারের জনক স্টিভ জবসের উদ্ভাবনকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশের প্রথম ডিজিটাল সংবাদ সংস্থা আবাস-এর চেয়ারম্যান মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বাংলা কনটেন্টের অপর্যাপ্ততা অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, প্রযুক্তিতে ভাষা শক্তিশালী করার জন্য করপাস শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, সব কিছু এককভাবে কেবল সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কন্টেন্ট তৈরির বড় শর্ত মেধা সম্পদকে শক্তিশালী করা। এক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, মোবাইল অপারেটরসহ টেলিকোম্পানিগুলো এগিয়ে আসলে তা মোটেও কঠিন হবে না। তিনি প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রয়োগে রবি আজিয়াটার উদ্যোগকে একটি অনুকরণীয় উদ্যোগ বলে প্রশংসা করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, একটি বিদেশি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি তার নামের মধ্যেও বাংলার প্রতি তাদের ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছে। রবি‘র ভারপ্রাপ্ত সিইও রিয়াজ রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিজয় ডিজিটাল-এর সিইও জেসমিন জুই, টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী এবং টেকশহর সম্পাদক মুহাম্মদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বিটিআরসি‘র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।রবির সিইও প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা প্রয়োগে রবি‘র প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বিজয় ডিজিটাল-এর প্রধান নির্বাহি জেসমিন জুই বলেন, প্রযুক্তিতে-বিশেষত শিশু শিক্ষায় উন্নতমানের বাংলা কনটেন্ট কিংবা বাংলা ভাষার প্রয়োগ ছিল অকল্পনীয়। ১৯৮৭ সালের পর বিজয় বাংলা সফটওয়্যার প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
তিনি বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল কনটেন্ট দেশের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বিশ্বের সব বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের জন্য এই সফটওয়্যারটি অনলাইন প্লাটফর্মে সহজলভ্য করার বিষয়েও তার প্রতিষ্ঠান চিন্তা-ভাবনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহারকে আরও ত্বরান্বিত করতে আমাদের সেই উপলদ্ধির জায়গাটা থেকে কাজ করতে হবে
সাংবাদিক রাশেদ মেহেদী বাংলা করপাস তৈরির ক্ষেত্রে অতি দ্রুত জরুরি পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানান। মুহম্মদ খান প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ করতে তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেন।