তামিমের বিকল্প কতটা হতে পারলেন তাঁরা

তামিম ইকবাল প্রায় দেড় বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি না খেললেও বিশ্বকাপ দলে তাঁকে রাখতে চেয়েছিলেন নির্বাচকেরা। তামিম বিশ্বকাপ না খেলার ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচকদের এটা নিয়ে আর বেশি ভাবতে হয়নি। সৌম্য সরকার, লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈমকে অনায়াসে রেখে দেওয়া গেছে বিশ্বকাপের দলে। কিন্তু গত দুটি সিরিজে তাঁরা নিজেদের কতটা ভালো বিকল্প হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেন?

এক মাসের মধ্যে তাসমান সাগরের দুই পাড়ের দুই দেশকে একই বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়ে মিরপুরের সবুজ আঙিনায় রচিত হয়েছে একের পর এক বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প। জয়ের অভ্যাস নিয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চে যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহর দল। কিন্তু সাফল্যের ভিড়ে একটা খচখচানি রয়ে গেল লিটন-সৌম্যদের নিয়ে।

ঘরের মাঠে সর্বশেষ দুই সিরিজের ১০ টি-টোয়েন্টির মধ্যে ৭টিই জিতেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের বেশির ভাগই বাংলাদেশ জয় পেয়েছে বোলারদের দারুণ নৈপুণ্যে। কয়েকটি ম্যাচে অবশ্য দারুণ ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান। তবে জয়ের গন্তব্যে পৌঁছার কাজটা আগেই সহজ হয়ে গিয়েছিল সাকিব আল হাসান-মোস্তাফিজুর রহমান-নাসুম আহমেদদের সৌজন্যে।

মিরপুরে দুই সিরিজের বেশির ভাগ ম্যাচই হয়েছে নিচু ও মন্থর উইকেটে। বিশ্বকাপে খেলতে হবে বড় স্কোর হয় এমন উইকেটে। বড় স্কোর গড়তে হলে সেখানে ব্যাটসম্যানদের শুরু থেকেই তুলতে হবে ঝড়। সর্বশেষ ম্যাচগুলোয় ব্যাটিং হাতে মলিন লিটন-সৌম্য কিংবা নাঈম সেই আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি পাবেন কোথায়?

ব্যর্থতার তালিকায় সবার আগে থাকবেন সৌম্য সরকার। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পাঁচটি ম্যাচেই খেলা সৌম্য প্রথম চার টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নেমে করেছেন ২, ০, ২ ও ৮। পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে ৪ নম্বরে নেমেও ব্যর্থই হয়েছেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম চার ম্যাচে একাদশেই জায়গা মেলেনি বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। শেষ টি-টোয়েন্টিতে ফিরেও আটকে রইলেন ব্যর্থতার ভিড়ে। ফিরেছেন ৪ রান করে।

আরেক ওপেনার লিটন দাসের সাদা বলের বিপক্ষে লড়াই অব্যাহতই আছে। পারিবারিক কারণে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে না খেলা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নিউজিল্যান্ড সিরিজের সব ম্যাচ খেলে করেছেন ৬৫ রান। গড় ১৩, স্ট্রাইক রেট মোটেও লিটনসুলভ নয়–৯৮.৪৮। অথচ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১২৯.৭৪।

এই দুজনের তুলনায় কিছুটা ভালো করেছেন নাঈম। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ৯১ রান করা নাঈম নিউজিল্যান্ড সিরিজে পেরিয়েছেন ১০০ রানের গণ্ডি। তবে সর্বশেষ দুই সিরিজে নাঈমের স্ট্রাইক রেট নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়–৮৭.৮৯। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি হয়েছিল ৪২ রানের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ওপেনিংয়ে ৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন লিটন-নাঈম।

এর মধ্যে নতুন চিন্তা হয়ে এসেছে ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ছন্দ হারিয়ে ফেলা। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সেরা সাকিব নিউজিল্যান্ড সিরিজে ৪ ম্যাচে ১১.২৫ গড়ে করেছেন ৪৫ রান। হঠাৎ ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ খ্যাত মুশফিকও। জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়া সিরিজে না খেললেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ মিলিয়ে এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের রান ৩৯। তাঁর স্ট্রাইক রেটও বড় মলিন–৫২।

টানা সিরিজ জয়ে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়লেও টপ অর্ডারের ছন্দ হারিয়ে ফেলাটা ভাবাচ্ছে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকে, ‘বোলাররা অসাধারণ খেলেছে। তবে টপ অর্ডার নিয়ে খচখচানি থেকে গেছে।
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের রান না পাওয়ার পেছনে যুক্তি আসছে, কন্ডিশন ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় কঠিন ছিল। তবে এই উইকেটেই কিন্তু নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম ৫৩ গড়ে ১৫৯ রান করে গেছেন। আর কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে দুটি ম্যাচ হেরেছে, দুটিতেই খেলা হয়েছে বেশ ভালো উইকেটে।

ব্যাটসম্যানদের ছন্দ হারিয়ে ফেলা নিয়ে বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলছেন, ‘আমরা কন্ডিশন দিয়ে জেতার চেষ্টা করেছি। জিম্বাবুয়ে থেকে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটসম্যানরা এসেছিল, সেখান থেকে এই সিরিজগুলোয় ব্যাটসম্যানরা ধীরে ধীরে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে। বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই ছন্দে নেই। এটা বড় অশনিসংকতে।

দেশের মাঠে ছন্দ হারিয়ে ফেললেও বিশ্বকাপের রানপ্রসবা উইকেটে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা রানে ফিরবেন বলেই বিশ্বাস হাবিবুলের। বললেন, ‘যখন বাইরের উইকেটে খেলব, বিশ্বকাপে যখন খেলব, আশা করি তখন ঠিক হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাকিবের সাক্ষাৎ