• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহী রুটে একটি পুরো ট্রেন ভাড়া করেছেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুন্না ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি- সিইসি ১৭ ঘণ্টাতেও উদ্ধার হয়নি শিশুটি, চলছে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ আজ সন্ধ্যা ৬টায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম প্রথম ধাপে ১২৫ জনের নাম ঘোষণা করলো এনসিপি রাষ্ট্রের ভয়ে কোনো বাংলাদেশিকে বাঁচতে হবে না-মানবাধিকার দিবসে তারেক রহমান তফসিল ঘোষণার পর থাকবে না ব্যানার-ফেস্টু, করা যাবে না মিছিল-মিটিং ইশতেহার তৈরিতে অনলাইনে জনতার মতামত নেবে জামায়াত গাজীপুরে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ দুর্নীতি দমনে বিএনপির ৭ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী এবং গেওয়া হুমকির মুখে

Reporter Name / ৮০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
The Sundarbans, a UNESCO World Heritage Site and a wildlife sanctuary. The largest littoral mangrove forest in the world, it covers an area of 38,500 sq km, about a third of which is covered in water. Sundarbans, Khulna, Bangladesh. March 2011.

সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী এবং গেওয়া হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজান থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনে লবণাক্ততা ক্রমে বাড়ছে। এতে করে সুন্দরী গাছের বিস্তার হওয়াতো দূরের কথা। দিন দিন বিলীন হচ্ছে সুন্দরী বৃক্ষ।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আগে সুন্দরী গাছ দিয়ে নৌকা এবং ঘর নির্মাণ করতো। কারখানায় সুন্দরী গাছ ব্যবহার করে হার্ডবোর্ড বানানো হতো। কিন্তু সুন্দরী গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনের কাঠ কাটার ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এতে মানুষের বাণিজ্যিক থাবার হাত থেকে সুন্দরী গাছ রক্ষা পেলেও প্রকৃতির হেয়ালি আচরণে সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী হুমকির মুখে পড়েছে। গবেষণা বলছে, সুন্দরীর বদলে সেসব জায়গা দখল করে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত খর্বকায় ‘কাকড়া’ জাতীয় উদ্ভিদ।

এমন এক পরিস্থিতিতে দেশে পালিত হতে যাচ্ছে সুন্দরবন দিবস। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় খুলনাসহ উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই দশক ধরে দিনটি উদযাপন হয়ে আসছে।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশ-এর উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

সুন্দরবনের মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়া ও সুন্দরীসহ প্রধান গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘এই পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি। দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের যেসব নদী সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে. সেগুলোর পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হলে সুন্দরবন সেটি কতটা সহ্য করতে পারবে, আমাদের আগেই বিবেচনা করা উচিত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কোনও সরকারই প্রকৃতি রক্ষায় গবেষণাধর্মী কোনও কাজ করেনি।’ তিনি বলেন, ‘মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। এখন উদ্যোগ নিলে হয়তো সুন্দরবনকে আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব না। কিন্তু সুন্দরবনকে বাঁচানো তো সম্ভব। তাই এখনই সুন্দরবন বাঁচাতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে।’

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) সম্প্রতি এক গবেষণায় বলছে,  সুন্দরী গাছের  পরিমাণ কমেছে ৭৯ ভাগ, আর কাকড়াজাতীয় গাছের পরিমাণ বেড়েছে ১৩৮১ শতাংশ। এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে— সুন্দরবনে বড় গাছের জায়গা দখল করছে ছোট গাছ। এতে করে সুন্দবনের প্রাণ প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্পারসো এই গবেষণার জন্য সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের উত্তর-পূর্বাংশের ২৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বেছে নেয়। মূলত ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে স্যাটেলাইট  ইমেজ বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় ১৯৮৯, ২০০০ ও ২০১০ সালের ইমেজগুলোও পর্যালোচনা করে স্পারসো বলছে,১৯৮৮ সালে সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের দিকে কাঁকড়া গাছের বিস্তৃতি ছিল ১৬৫ হেক্টর, যা ২০২২ সালে এসে ১৩৮২ শতাংশ বেড়েছে। এখন এই এলাকায় কাকড়া গাছের বিস্তার ২২৭৯ হেক্টরে।

অপরদিকে সুন্দরবনের প্রধান গাছ সুন্দরী এবং গেওয়া গাছ ছিল ১৫ হাজার ৯৬৯ হেক্টরে, ২০২২ সালে এসে যা কমে হয়েছে ১২ হাজার ৫৮৩ হেক্টর। অর্থাৎ প্রধান দুই গাছ কমেছে ৭৯ শতাংশ।

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বলা হয়, সুন্দরী এবং গেওয়া মূলত লবণাক্ত এলাকার গাছ। গাছের ফল পরিপক্ক হলে আপনা-আপনি কাঁদা মাটিতে পড়ে বীজ ফেটে চারা গজায়। কিন্তু পানি এবং কাঁদায় লবণের পরিমাণ বেশি হলে গাছের শেকড় চারা অবস্থায় মাটির খুব গভীরে যেতে পারে না। এতে চারা গজানোর হার কমে যায়। যেহেতু বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের পুরোটাই প্রকৃতির সৃষ্টি, তাই প্রকৃতি যাতে বিনষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফারাক্কার কারণে উজানের পানি প্রবাহ কমে যাওয়াতে সুন্দরবনে দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘উজানের পানি আসা কমে যাওয়া এবং নানা জায়গায় বাঁধ দেওয়ায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ কমে এসেছে। ফলে সুন্দরীসহ সুন্দরবনের প্রধান গাছগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে মিঠা পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সুন্দরবনের পুরো ইকোসিস্টেমের ওপরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে করে পুরো সুন্দরবন আজ  হুমকির মুখে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে উজান থেকে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব বাঁধ সুন্দরবনের পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে, চিহ্নিত করে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, নাগরিক উদ্যোগ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সিডাস ও গ্রিন ভয়েসসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সুন্দরবন বিনাশী সব কর্মকাণ্ড বন্ধের’ দাবিতে এক মানববন্ধন ও র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাপা সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বাপার নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও হুমায়ুন কবির সুমনসহ বাপার কেন্দ্রীয় নেতারা ও পরিবেশবাদীরা। এছাড়া খুলনা ও বাগেরহাটে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর

৯৯ রান যোগ করেই শেষ রাজশাহী, রংপুরের বড় জয়জাতীয় ক্রিকেট লিগে তৃতীয় দিন শেষেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল রংপুর বিভাগ। জয়ের জন্য চতুর্থ দিন দরকার ছিল রাজশাহীর চার উইকেট। প্রথম সেশনে রাজশাহীর গোলাম কিবরিয়া কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও সেটি যথেষ্ট ছিল না। মঙ্গলবার রাজশাহীর জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০১ রান। কিন্তু আগের দিন ৬২ রান করা রাজশাহী আজ আরও ৯৯ রান যোগ করেই থেমে গেছে। তাতে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে রংপুর। দলটির জয়ের নায়ক আরিফুল হক। সেঞ্চুরির পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার জয়ের সুবাস নিয়েই খেলতে নেমেছিল রংপুর। লিগের চতুর্থ রাউন্ডে সোমবার ম্যাচের তৃতীয় দিন ২৬৩ রানের লক্ষ্য দেয় তারা। কিন্তু শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে রাজশাহী ৬২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চতুর্থ দিনে জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল আরও ৪ উইকেট। তার পর প্রতিপক্ষকে সহজেই ১৬১ রানে অলআউট করেছে। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন গোলাম কিবরিয়া। ৬৫ বলে খেলেছেন ৫৬ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসে সানজামুলের ব্যাট থেকে (২৩) রান। রংপুরের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন আরিফুল হক। তৃতীয় দিনে তার চমৎকার বোলিংয়ে মূলত ম্যাচে ফেরে রংপুর। ৩ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে রংপুরের জয়ের পথটা তিনিই তৈরি করেছেন। পরপর দুই বলে প্রিতম ও ওয়াসিকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান তিনি। শেষ পর্যন্ত যদিও কীর্তিটি গড়তে পারেননি। এছাড়া রবিউল হক, আব্দুল গাফফার ও আবু হাসিম প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন। শুরুতে টস হেরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিল রংপুর। প্রথম ইনিংসে আরিফুলের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভর করে ১৮৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় তারা। আরিফুল ছাড়া দলের সবাই ছিলেন ব্যর্থ। ১৬১ বলে ১০৩ রানে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলের সাক্ষী হয়েছেন তিনি। রংপুরকে অল্পরানে গুটিয়ে দেওয়ার নায়ক ছিলেন সাব্বির হোসেন। তিনি একাই নেন ছয়টি উইকেট। এরপর রাজশাহী তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান ও রবিউল হকের বোলিংয়ে ১৮৯ রানে থামে দলটির ইনিংস। সাব্বির হোসেন ৪৭ ও ওয়াইসি সিদ্দিকি খেলেন ৩৯ রানের ইনিংস। জবাবে রংপুরের টপ অর্ডার ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেনি। অধিনায়ক আকবর আলী ৭৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাছাড়া তানভীর হায়দার (৪০), মিম মোসাদ্দেক (৩৩), চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান (৩২) রানের ইনিংস খেলেছেন। তাদের অবদানে রংপুরের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬২ রান।