বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে। সোমবার (১ এপ্রিল) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, রাজনীতি বন্ধ করে যে নোটিশ দিয়েছিল সেটিই স্থগিত চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চলমান নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি ও ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা। এই কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন।

রোববার (৩১ মার্চ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতির মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের অবস্থান কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়। ছাত্রদল যখন ২০২১ সালে আহ্বায়ক কমিটি দেয় তখনও আমরা তীব্র আন্দোলন করেছি। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরোধী। আর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সেই জায়গা থেকে তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে রাজনৈতিক চর্চায় জড়িতদের বিরোধিতা করে আসছে। বুয়েটের বাইরে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে না বরং তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে ওই দিন রাতে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় নিয়ম অমান্য করে বুয়েটের ভিতরে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অনুপ্রবেশ করার জন্য। ক্যাম্পাসে, হলে কিংবা ক্লাসে কারও ওপর কোনো রকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার।

তারা বলেন, বুয়েটের ইমতিয়াজ রাব্বি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদপ্রাপ্ত এবং ইতোপূর্বে সে তার পদ সরিয়ে নেওয়ার কথা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এই পরিচয় ব্যবহার করে। সে এবং তদসংশ্লিষ্ট আরও ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারে তাহলে অতিদ্রুত বুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা কেবল সময়ের ব্যাপার- এ আশঙ্কা থেকেই এ আন্দোলন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয় বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী বহিরাগতদের লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে এদের কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে দেখা গেছে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে স্পষ্ট নই। আমাদের ইনস্টিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডব্লিউ স্যারকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই প্রথমে জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিতভাবে আহ্বান জানাই এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাব।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা।

এ প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাতে উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।