আ.লীগ-বিএনপি মুখোমুখি, সংঘাতের শঙ্কা

আ.লীগ-বিএনপি মুখোমুখি, সংঘাতের শঙ্কা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পালটাপালটি কর্মসূচি, হামলা-পালটাহামলায় গরম হয়ে উঠেছে রাজপথ। বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা। মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। দুই দলের নেতাকর্মীদের অসহিষ্ণুতা ও অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে বন্দরনগরীতে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন আর শুধু মিছিল-স্লোগানে সীমাবদ্ধ নেই। হয়ে উঠছে সহিংস। বুধবার চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। নগরীর দামপাড়ায় নির্বাচনি কার্যালয়ে এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই পালটা হামলা হয় সেখান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নূর আহমদ সড়কে নগর বিএনপির কার্যালয়ে। আর এ হামলার জন্য বিএনপি দায়ী করে আওয়ামী লীগকে।

নগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী যুগান্তরকে বলেন, নগরীর লালখানবাজার ও নন্দনকানন এলাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দুটি দল মিছিলসহকারে এসে পুলিশের সামনেই বিএনপির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ তান্ডব চালিয়েছে। হামলার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, হামলাকারী এক যুবকের হাতে সাদা ব্যানারে মোড়ানো একটি বড় আকারের আগ্নেয়াস্ত্র। যুবকটি হেলমেট পরা ছিল, তাকে চেনা যাচ্ছে না। আমরা ওই যুবককে গ্রেফতার ও অস্ত্রটি উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন, সেটি সেছুই ছিল না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এতদিন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম নগরীতে পালটাপালটি কর্মসূচি দিলেও তা ছিল অনেকটাই শান্তিপূর্ণ। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়েছে। কিন্তু গত ছয় মাসে দু-একটি ঘটনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তেমন বড় ধরনের কিছু ঘটেনি। বিএনপির সমাবেশ-পদযাত্রার বিপরীতে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ, উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রাসহ কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ একাধিকবার নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিলেও তা ছিল অনেকটাই শান্তিপূর্ণ। যে যার মতো কর্মসূচি পালন করে ঘরে ফিরেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বদলে গেছে সেই চিত্র। বিশেষ করে বুধবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা ও নগর বিএনপি কার্যালয়ে পালটা হামলার পর থেকে দুই দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।

নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদ চত্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে সর্বস্তরের স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষকে নিয়ে দুর্গ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিন। যারা নাশকতা চালাচ্ছে, তাদের নাম এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখুন। আমরা তাদের কিছুতেই ঘরে বাইরে শান্তিতে থাকতে দিতে পারি না।

বিএনপি আগুন নিয়ে খেলছে উল্লেখ করে নাছির বলেন, তারা নাশকতা ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের উদ্দেশে স্পষ্ট করে বলতে চাই, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির কুমতলবে তাদেরকে আর কোনো সভা সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরা আর প্রতিবাদ সভা করব না, এবার সরাসরি অ্যাকশনে নামব।

এদিকে বিএনপি কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে নগর বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নূর আহমদ সড়কের দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএনপিকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যাবে না। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। চট্টগ্রামে বুধবার বিএনপির পদযাত্রায় মানুষের ঢল দেখে আওয়ামী লীগ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা সহ্য করতে না পেরে বিনা উসকানিতে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।

সমাবেশে নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ফায়ার করতে করতে বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তাদেরকে কিছুই বলেনি, উলটো নিরপরাধ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। তিনি পুলিশকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *