
প্রিয়জন ডেস্কঃ প্রান্তিক পর্যায়ের মাছ চাষিরা দিন দিন প্রতারিত হচ্ছেন নকল ওষুধ কারবারি রহিম চক্রের ফাঁদে। সুনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানির নাম ও মোড়ক ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বাজারে নকল মাছের ওষুধ সরবরাহ করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
সম্প্রতি নওগাঁয় পরিচালিত অভিযানে সেই প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে।
বাগমারা উপজেলার মাছ চাষি মো.রাজু আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে গ্ল্যাক্সো–এগ্রোভেট কোম্পানির অনুমোদিত ওষুধ ব্যবহার করে মাছ চাষ করতেন।
তবে কিছুদিন ধরে ব্যবহৃত ওষুধে কোনো কার্যকারিতা না পাওয়ায় বিষয়টি কোম্পানিকে জানানো হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার রাতে গ্ল্যাক্সো–এগ্রোভেট কর্তৃপক্ষ ওষুধগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন-সেগুলো সম্পূর্ণ নকল।
জানা যায়, এসব নকল ওষুধ মাছ চাষি রাজু সংগ্রহ করেছিলেন মো. আব্দুর রহিমের কাছ থেকে।
এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর উপজেলার ডাক্তারের মোড় সংলগ্ন নর্থ বেঙ্গল গ্রেইন ইন্ডাস্ট্রিজ লি.–এর অটোরাইস মিলের পাশের একটি গোডাউনে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নওশাদ হাসান।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ নকল মাছের ওষুধ, বিভিন্ন নামী কোম্পানির জাল মোড়ক, কাঁচামাল ও উৎপাদন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরে গোডাউনটি সিলগালা করা হয়।
অভিযানকালে কারখানার সঙ্গে জড়িত কাউকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া না গেলেও তদন্তে জানা যায়, গোডাউনটি পরিচালনা করছিলেন মো. আব্দুর রহিম ও মোস্তাফিজুর রহমান। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে আব্দুর রহিমকে ঘিরেই উঠে এসেছে গুরুতর অভিযোগ।
অভিযান এর ব্যাপারে সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. বায়েজিদ আলম বলেন,“একটি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে নকল মাছের ওষুধ তৈরির সত্যতা পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, মো. আব্দুর রহিম বাগমারা উপজেলার বিহানালী পশ্চিমকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সামসুর রহমানের ছেলে। তিনি পূর্বে গ্ল্যাক্সো–এগ্রোভেট কোম্পানিতে নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকায় মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কোম্পানি কতৃপক্ষ জানায়, চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ, নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ে নকল পণ্য বাজারজাত, কোম্পানির মোড়ক জাল করা এবং নানা অনিয়ম ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গ্ল্যাক্সো–এগ্রোভেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কোম্পানির নাম ও মোড়ক জাল করে নকল পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছিল। এর ফলে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং কোম্পানির সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি আরও জানান, চলতি মাসের ৭ তারিখে পরিচালিত অভিযানে রহিমের প্রতারণার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ভবানীগঞ্জ বাজারে এক মাছচাষী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া আরও অনেক চাষী রয়েছেন, যাদের কাছে আমাদের কোম্পানির জাল মোড়ক ব্যবহার করে নকল পণ্য বিক্রি করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিনি সকলকে অত্যন্ত সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক মাছ চাষিরা দ্রুত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন প্রতারণার শিকার না হন।