নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘খুনি’ বলা আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর সাংবাদিকরা এখনো গণমাধ্যমে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। মামলা দায়ের হলেও জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছেন তারা। উল্টো ভোল পাল্টে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা’ ধারণকারীও বনে গেছেন কেউ কেউ! এর আগে দলীয় বিবেচনায় আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পর ২৭ আগস্ট রাজশাহীর ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে দায়ের হওয়া ওই মামলায় আরও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলায় আসামিরা হলেন- দৈনিক কালের কণ্ঠের রফিকুল ইসলাম, জিটিভির রাশেদ রিপন, দৈনিক করতোয়া পত্রিকার রোজিনা সুলতানা রোজি ও দৈনিক উপচারের আসগর আলী সাগর।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ‘২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে মহাসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। সেখানে সংবাদ কাভারের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত মিডিয়া কার্ড ইস্যু করা হয়। সে সময় অনেক সাংবাদিক সে কার্ড স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু রফিকুল, রাশেদ রিপন, রোজি ও সাগরসহ কয়েকজন সাংবাদিক কার্ড গ্রহণ না করে মহাসমাবেশের আগের দিন ২ ডিসেম্বর বজলুল হক মন্টুর কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। মন্টু চাঁদা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আসামিরা হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে আসামিরা বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর, অপমানজনক ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে খুনি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন মানহানিকর মন্তব্য করে নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করে। মানহানিকর ওই সংবাদটি মহাসমাবেশের দিন অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিতে প্রচারিত হয়।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রফিকুলের পিতা পেশায় সাইকেল মিস্ত্রী ছিলেন। সাংবাদিকতা শুরু করে জেলার দুর্গাপুর থেকে শহরে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রফিকুল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ‘পোষা সাংবাদিক’ ছিলেন তিনি। এ দুজনের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তথ্যসন্ত্রাস চালিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার না নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য লিখে নিউজ করেছেন একাধিকবার। তবে এখনো কালের কণ্ঠ পত্রিকায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন রফিকুল।
ওই মামলা আরেক আসামি আসগর আলী সাগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসদের ‘ডানহাত’ ছিলেন তিনি। আসাদের সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেন সাগর। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনিও নগরীতে প্রকাশ্যে ঘুরছেন। একমাত্র নারী আসামি রোজিনা সুলতানা রোজি রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হকের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন। ঢাকা থেকে এনামুল রাজশাহী আসলে তার সাথে বিশেষ সময় কাটাতেন রোজি। এছাড়া জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মামুনের প্রেমিকা হিসেবেও মিডিয়া মহলে তার পরিচিতি ছিল। মামুনের সাথেও অসংখ্য ঘনিষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন রোজি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের আগের কয়েকদিন ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে সংবাদ করার জন্য রাজশাহীর আওয়ামী লীগের দোসর সাংবাদিকদের কাড়ি কাড়ি টাকা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন নগর ভবনে ডেকে এসব টাকা দেন। হাসিনার পতন হলে সেই লিটন বর্তমানে পরিবারসহ ভারতে পালিয়ে আছেন। সম্প্রতি রাজশাহীর কয়েকজন সাংবাদিক ভারতে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ শুরু করতে তারা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।
এসব ঘটনায় সাংবাদিক নেতারা চরম ক্ষুব্ধ। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ও সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে যোগ্য ও বঞ্চিতদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম জুলু বলেন, দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু রাজশাহীতে গণমাধ্যম স্বৈরাচার ও ভারতের কব্জামুক্ত হয়নি। সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে, ওই কমিশনের প্রধান রাজশাহীতেও এসেছিলেন। তবু এখনো কীভাবে আওয়ামী লীগ ও ভারতের র-এর এজেন্টরা গণমাধ্যমে থাকে, আমার প্রশ্ন।
সাংবাদিক জুলু বলেন, চিহ্নিত আওয়ামী লীগের দালাল সাংবাদিকদের অপসারণ করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতাসহ পেশাজীবীদের নিয়ে রাজশাহীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি, জীবন গেলেও আপোষ করবো না।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও দায়ের হওয়া মামলাটির বাদি বজলুল হক মন্টু বলেন, হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। তারা সাংবাদিকতার নামে খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতো। তারা এখনো কিভাবে গণমাধ্যম গুলোতে বহাল থাকে আমার প্রশ্ন। তাদেরকে এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? বোয়ালিয়া থানা পুলিশ স্বৈরাচারের দোসরদের ধরছে না, আমি নিজেই হতাশ। আমার করা মামলার একটা আসামিও এরেস্ট হয়নি। মন্টু বলেন, আমাকে মেরে ফেলছিল, আইসিইউতে ছিলাম। কিন্তু আসামিরা কেউ এরেস্ট হয়নি। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার ও হলুদ সাংবাদিকদের চাকরি থেকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলা করেছে। আমি জামিনে নাই এটা সঠিক। কিন্তু হঠাৎ নিউজ করার কি হলো বুঝতে পারছি না; আমরা তো আপনাদের সাপোর্ট দিছি, আপনাদের বিরুদ্ধে আর কোথাও কিছু বলিনি। আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, জামিনের বিষয় আমার জানা নেই। কাগজপত্র দেখতে হবে। আর বোয়ালিয়া থানার ওসি মোসতাক হোসেন বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
15g1ug
tjayj8