প্রিয়জন ডেস্কঃ রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হেডমোহরার কাজী মো: শাহ আলমের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, বিভাগীয় মামলা এবং সাময়িক বরখাস্তের আদেশ থাকলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ১০মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ( আর এমপি) কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ অনুযায়ী বিতর্কিত এই কর্মচারীকে উপ-পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিক) এর কার্যালয় থেকে আরএমপি সদর দপ্তরের ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারি শাখায় বদলি করা হয়েছে।
চাকরির আড়ালে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক
দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ থাকার পরও একজন হেড মোহরারের এত ক্ষমতার উৎস কী—এমন প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ বিভাগের ভেতরেও। দীর্ঘ এক যুগ ধরে তিনি আরএমপিতে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রভাব বিস্তারকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়ে চাকুরি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সামাজিক ভাবেও আকাশচুম্বি ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে
বদলি বাণিজ্য, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, রেশন স্টোরে দুর্নীতি এবং পুলিশের পদোন্নতি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। অভিযোগ রয়েছে পুলিশের সাধারণ সদস্য থেকে শুরু করে আরএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারাও তার হাতের মুঠোয় রয়েছে। আরএমপির কয়েকজন পুলিশ সদস্য অভিযোগ করে বলেন ,
কাজী শাহ আলম পুলিশ কমিশনারদের ম্যানেজ করে তাদের ওপর নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। তারা আরও বলেন,
আরএমপির কমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে যারাই আসেন, শাহ আলম অল্প
দিনের মধ্যেই কৌশলে তাদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন । সেই সুবাদে সব থানার ওপরই তিনি প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ কমিশনারের নামে চাঁদাবাজি করে
থাকেন। কখনও কখনও তিনি নিজে সরাসরি প্রভাব খাটাতে না পারলেও পুলিশ কমিশনার দিয়ে তা করিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকার ফলে সে সব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে কখনোই কোনো ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি।
দুর্নীতি, অনিয়মের যত অভিযোগ
হেডমোহরার কাজী মো: শাহ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বেশ পুরনো। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাবনার কাশীনাথপুর এলাকার এক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকের ছেলে কাজী মো: শাহ আলম ২০০০ সালে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতরে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে হেড মোহরার হন। হেডমোহরারের দায়িত্ব লাভের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দুর্নীতি করে আখের গোছাতে শুরু করেন। বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ভালো সক্ষ্যতা থাকায় আরএমপিতে কর্মরত
পুলিশ সদস্যদের জন্য তিনি হয়ে উঠেন বড় ফ্যাক্টর। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভালো সম্পর্কের সুবাদে বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি ও টেন্ডার পাইয়ে দিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে সব সুবিধা আদায়ের সুযোগ হাতিয়ে নেন তিনি।
আর এইভাবেই বিভিন্ন সুযোগকে পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়েই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও বিত্তের অধিকারী হয়েছেন কাজী মো: শাহ আলম।
অভিযোগ রয়েছে, আরএমপি’র বিভিন্ন থানায় ওসি, এসআই ও কনস্টেবলের বদলিতে কাজী শাহ আলম প্রভাব বিস্তার করেন। এসব বদলি নিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া, রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতর পুলিশ রেশন স্টোরের জন্য মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, পোলাত্তয়ের চাল এবং জ্বালানি কাঠসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে গোপনে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে কমিশনের টাকা নিজের পকেটে ঢুকান বলে অভিযোগ করেছিলেন অনেক ঠিকাদার। পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে একজন
ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। উল্লেখ্য, সাবেক পুলিশ কমিশনার মনির উজ-জামান এর কাছে রেশন স্টোরের মালামাল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে
শাহ আলমের বিরুদ্ধে কয়েকটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল । কিন্তু তাতেও শাহ আলমের কিছু যায়-আসেনি।
এছাড়াও, ২০১২ সালের ২৩ মার্চে আরএমপিতে সিভিল কর্মচারী আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত ঐ আটজন কর্মচারী হেড মোহরার কাজী শাহ আলমের আত্মীয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের একটি সূত্র আরও জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে মোটরযান শাখায় টেন্ডার আইটেম ছিল ১২শ’। অথচ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আইটেম সংখ্যা রয়েছে মাত্র ১৫৮টি। বাকি আইটেমগুলো কোটেশনের মাধ্যমে কেনার
🍟 🦴 A A Noman, [3/17/2025 5:13 PM]
পেছনেও রয়েছে শাহ আলমের হাত। এছাড়া তিনি হাসপাতালে ওষুধ সাপ্লাইয়ের ঠিকাদারিও করছেন সহযোগীদের মাধ্যমে।এই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, পুলিশ কমিশনারের সাথে ভালো সম্পর্কের উছিলায় তদন্ত রিপোর্ট আর কখনোই প্রকাশিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, কাজী শাহ আলমের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্যও পাওয়া গেছে। রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় তার স্ত্রীর নামে ছয়তলা একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে, যেখানে এসির ব্যবস্থা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, রাজশাহী ও পাবনার নাজিরগঞ্জ এলাকায় তার বিপুল সম্পত্তি রয়েছে এবং রাজশাহীর আরডিএ ভবনে তার নামে দোকান বরাদ্দ রয়েছে বলেও জানা যায়। যদিও কাজী মো: শাহ আলম তার বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এবং সম্প্রতি তার বদলির বিষয়ে জানতে কাজী মো: শাহ আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন, এই বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে কল কেটে দেন তিনি।
বিভাগীয় মামলা ও আদালতের স্থগিতাদেশ
২০১৫ সালে কাজী শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং- ০৬/২০১৫, তারিখ ২৩-১২-২০১৫)। এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় (স্মারক নং- আরএমপি/প্রশা/অভিযোগ/১-৭৪/২০১৫/২৩৭৮)।
পরে তিনি হাইকোর্টে রিট মামলা (নং- ১৫৩/২০১৭) দায়ের করলে প্রথমে তিন মাসের জন্য এবং পরে বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিতাদেশ পান। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল ছিল। কিন্তু এরপর এর মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি।
স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি নিয়মিত অফিস করে যাচ্ছিলেন। আরএমপি সদর দফতর বিষয়টি জানার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আইন কর্মকর্তার পরামর্শ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
শাহ আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের বক্তব্য ও তদন্ত প্রতিবেদন
শাহ আলমের বিরুদ্ধে অতীতে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছিল।
সাবেক পুলিশ কমিশনার মনির উজ-জামানের সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ হয়েছিল, তবে উচ্চপর্যায়ের প্রভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। বোয়ালিয়া মডেল থানার সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার রোকোনুজ্জামানও তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি একটি জাতীয় সংবাদপত্রে স্বীকার করেছিলেন, উপর থেকে চাপের কারণে তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারেননি।
নতুন করে বদলি, বহাল তবিয়তে চাকরি
দুর্নীতি, বিভাগীয় মামলা এবং বরখাস্ত আদেশ ও নানান অনিয়মের পরও বিতর্কিত এই কর্মচারীকে ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে আরএমপির সদর দফতরের ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারি শাখায় বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ বাহিনীর ভেতরেও বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
একজন হেড মোহরারের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, বিভাগীয় মামলা, আদালতের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কীভাবে তিনি চাকরিতে বহাল থাকেন—এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বদলির মাধ্যমে তাকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
TAn ZzYezkq cEs eqnDd LAlGJJ QjpJ HrOmK
zlzenp
g2isjm