• ঢাকা, বাংলাদেশ বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহী রুটে একটি পুরো ট্রেন ভাড়া করেছেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুন্না নির্বাচনি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন ৪৮ হাজার পুলিশ সদস্য আশরাফুলের কোচ হওয়া প্রসঙ্গে যা বলছেন সাবেকরা চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪ নেতাকে বিএনপির বহিষ্কার ইসলামি দলগুলোর এক বাক্সে ভোট হবে-ডা. তাহের ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন, সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে জামায়াতসহ ৮ দল খুলনায় বিএনপির কার্যালয়ে দুর্বৃত্তের বোমা হামলায় নিহত ১, আহত ২ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতীয় নারীদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় জেলহত্যা দিবস আজ চার বিশ্ববিদ্যায়ে শিবিরের ভূমিধস জয় রহস্যজনক-নুরুল হক নুর

‘আমরা জীবনের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম’

Reporter Name / ২৫২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

‘আমরা যে ৩৩ দিন তাদের হাতে জিম্মি ছিলাম। কেউই চিন্তা করিনি সবাই সুস্থভাবে পরিবারের কাছে ফিরব। ভেবেছিলাম কেউ ফিরবে আবার কেউ ফিরবে না। ওখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অনেকটা মৃত্যুকূপ থেকে ফেরার মতো। আল্লাহর রহমত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি এবং আমাদের মালিকপক্ষও দ্রুত সাড়া দিয়েছেন। ওনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

বুধবার (১৫ মে) জিম্মিদশা থেকে বাড়ি ফিরে আবেগাপ্লুত হয়ে  নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন নোয়াখালী চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া গ্রামের বাসিন্দা ও এমভি আবদুল্লাহর ইঞ্জিন ফিটার মো. সালেহ আহমেদ।

তিনি বলেন, ১২ মার্চ যখন আমাদের প্রথম আক্রমণ করে ওরা ১২ জন ছিল। সোমালিয়ায় আমাদের নেওয়ার পর তারা ৫০ জনের মতো হয়ে যায়। যখনি কোনো জাহাজ আমাদেরকে উদ্ধারের জন্য আসতে চেষ্টা করেছে, তখন আরও শঙ্কায় পড়ে যেতাম। আমরা তখন দস্যুদের অস্ত্রের সামনে থাকতাম। আমরা জীবনের মায়া ছেড়ে দিতাম। আমাদের ক্যাপ্টেন স্যার এটা অনেক টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমাদের কোম্পানির সিইওসহ সবাই সবাই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন।

জিম্মিদশার বিভীষিকাময় সময় স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মো. সালেহ আহমেদ। এমভি আবদুল্লাহর এ কর্মকর্তা   বলেন, পরিবারের মাঝে ফিরে আসা ঈদের আনন্দের চাইতেও বেশি। নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। ওরা যখন আমাদের জাহাজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তখন আমরা জীবনের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।

মো. সালেহ আহমেদ বলেন, জলদস্যুদের  জিম্মি করার পর বারবার মেয়েদের কথাই মনে পড়ছিল। আমি কখনও তাদের আশা অপূর্ণ রাখিনি। আমার কিছু হয়ে গেলে তারা কোথায় যাবে। তারা কার দরজায় দাঁড়াবে। আমি হযতো তাদের মুখ দেখতে পারব না। সন্তানরা আমাকে আর বাবা বলে ডাকতে পারবে কিনা। মহান আল্লাহর রহমত আর মানুষের দোয়া ছিল। আমাদের কোম্পানি এবং সরকারের সহযোগিতা ছিল সবচেয়ে বেশি। যারা আমার পরিবারের খোঁজখবর রেখেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

চট্টগ্রাম থেকে বুধবার বিকেলে নিজ বাড়িতে ফেরেন মো. সালেহ আহমেদ। বাড়িতে আসার পর তাকে বরণ করে নেন স্বজনরা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।

জানা গেছে, চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে মো. সালেহ আহমেদ সবার বড়। তার স্ত্রী ও তিন মেয়েসন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে রিয়াজুল জান্নাত তাসফি দশম শ্রেণিতে পড়ে। মেজো মেয়ে ফাহমিদা আক্তার ফাইজা একই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে হাফসা বিনতে সালেহর বয়স মাত্র তিন বছর।

সালেহের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে একনজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় জমান। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাবাকে কাছে পেয়ে তিন মেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন ফুল নিয়ে দেখা করতে আসেন সালেহের বাড়িতে। এ সময় চাটখিল থানার ওসি মুহাম্মদ ইমদাদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।

বড় মেয়ে রিয়াজুল জান্নাত তাসফি কালবেলাকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আব্বু ফিরে আসার পর অনেক ভালো লাগছে। এ জন্য দেশের সরকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেএসআরএম গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আমার বাবাকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি। আমাদের জন্য এর থেকে আনন্দের আর কিছু নেই।

সালেহের চাচাতো ভাই মনির হোসেন সোহেল বলেন, সালেহ ভাই সবসময় পরিবার নিয়ে ভাবেন। বাড়িতে থাকলে মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটান। তিনি মেয়েদের সকল শখ পূরণ করেন। তিনি বাড়িতে ফেরায় আমরা সবাই খুশি।

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, আমরা উনাদেরকে নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। একটি অনিশ্চিত জীবন থেকে ফিরে এসেছেন মো. সালেহ আহমেদ। তার বাড়িতে গিয়ে ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তিনি জিম্মি থাকার সময় থেকে আমরা তার পরিবারের খোঁজ খবর রেখিছিলাম। আগামীতেও আমরা ওনাদের খোঁজখবর রাখব।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (এনসিটি) নম্বরে এসে পৌঁছান ২৩ নাবিক। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের বরণ করতে উপস্থিত হন স্বজন ও কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও ২৩ নাবিক। ৩৩ দিন পর জাহাজসহ নাবিকরা গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনাপাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে দুই মাসেরও বেশি সময়ের পর মুক্ত নাবিকরা দেশে ফিরে এসেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর

৯৯ রান যোগ করেই শেষ রাজশাহী, রংপুরের বড় জয়জাতীয় ক্রিকেট লিগে তৃতীয় দিন শেষেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল রংপুর বিভাগ। জয়ের জন্য চতুর্থ দিন দরকার ছিল রাজশাহীর চার উইকেট। প্রথম সেশনে রাজশাহীর গোলাম কিবরিয়া কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও সেটি যথেষ্ট ছিল না। মঙ্গলবার রাজশাহীর জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০১ রান। কিন্তু আগের দিন ৬২ রান করা রাজশাহী আজ আরও ৯৯ রান যোগ করেই থেমে গেছে। তাতে ১০১ রানের বড় জয় পেয়েছে রংপুর। দলটির জয়ের নায়ক আরিফুল হক। সেঞ্চুরির পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার জয়ের সুবাস নিয়েই খেলতে নেমেছিল রংপুর। লিগের চতুর্থ রাউন্ডে সোমবার ম্যাচের তৃতীয় দিন ২৬৩ রানের লক্ষ্য দেয় তারা। কিন্তু শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে রাজশাহী ৬২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চতুর্থ দিনে জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল আরও ৪ উইকেট। তার পর প্রতিপক্ষকে সহজেই ১৬১ রানে অলআউট করেছে। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন গোলাম কিবরিয়া। ৬৫ বলে খেলেছেন ৫৬ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসে সানজামুলের ব্যাট থেকে (২৩) রান। রংপুরের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন আরিফুল হক। তৃতীয় দিনে তার চমৎকার বোলিংয়ে মূলত ম্যাচে ফেরে রংপুর। ৩ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে রংপুরের জয়ের পথটা তিনিই তৈরি করেছেন। পরপর দুই বলে প্রিতম ও ওয়াসিকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান তিনি। শেষ পর্যন্ত যদিও কীর্তিটি গড়তে পারেননি। এছাড়া রবিউল হক, আব্দুল গাফফার ও আবু হাসিম প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন। শুরুতে টস হেরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিল রংপুর। প্রথম ইনিংসে আরিফুলের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভর করে ১৮৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় তারা। আরিফুল ছাড়া দলের সবাই ছিলেন ব্যর্থ। ১৬১ বলে ১০৩ রানে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলের সাক্ষী হয়েছেন তিনি। রংপুরকে অল্পরানে গুটিয়ে দেওয়ার নায়ক ছিলেন সাব্বির হোসেন। তিনি একাই নেন ছয়টি উইকেট। এরপর রাজশাহী তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান ও রবিউল হকের বোলিংয়ে ১৮৯ রানে থামে দলটির ইনিংস। সাব্বির হোসেন ৪৭ ও ওয়াইসি সিদ্দিকি খেলেন ৩৯ রানের ইনিংস। জবাবে রংপুরের টপ অর্ডার ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেনি। অধিনায়ক আকবর আলী ৭৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাছাড়া তানভীর হায়দার (৪০), মিম মোসাদ্দেক (৩৩), চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান (৩২) রানের ইনিংস খেলেছেন। তাদের অবদানে রংপুরের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬২ রান।