ব্যাংকটির গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এবং সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, গত বছর শেষে ইসলামি ধারার এই ব্যাংকে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ প্রায় ১৪ টাকা ঋণাত্মক ছিল। ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল ৯ টাকা ৩৮ পয়সা।
তবে ২০২২ সালে ব্যাংকটির নিট মুনাফা বেড়ে হয়েছে ১৫১ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৮৭ কোটি টাকা।
আমানতের তুলনায় ঋণ বেশি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শেষ ব্যাংকটির ঋণ বেড়ে হয় ২২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১৯ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। ২০২১ সাল শেষে ঋণ ছিল ১৯ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় গত বছরের সেপ্টেম্বরের ঋণ কিছুটা কমে যায়। তবে অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ঋণ বেড়ে যায় ২ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা।
এদিকে গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে আমানত ছিল ২১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ২০ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির আমানত ২১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা হলেও গত বছর শেষে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। ফলে আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকটি। পাশাপাশি শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কয়েকটি ব্যাংককে বিশেষ বিবেচনায় টাকা ধার দেয়, তার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকও একটি। ওই ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাহিদামতো নগদ অর্থ জমা রাখতে ব্যর্থ হয়।
ভরসা অন্য ব্যাংকের ওপর
ব্যাংকটি মূলত গ্রাহক আমানতের পরিবর্তনে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার ও আমানত এনে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, গত বছর ইউনিয়ন ব্যাংকে অন্য ব্যাংকগুলোর জমা রাখা আমানত বেড়ে হয় ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা ২০২১ সাল শেষে ছিল ৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৩৪৯ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩১৪ কোটি টাকা ও আল-আরাফাহ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা।
ব্যাংকটি ঋণের মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি দিয়েছে ঢাকা বিভাগে ও ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি চট্টগ্রামে। অন্য বিভাগের ঋণের পরিমাণ সামান্যই। গত বছরে ব্যাংকঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হলেও তহবিল খরচ ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর খেলাপি ঋণের হার কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের বক্তব্য জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আলোচিত ভল্টে টাকা কমের কারণে
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্টে ১৯ কোটি টাকার গরমিল পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকটি পরিদর্শনে গিয়ে ঋণ অনিয়মের আরও নানা তথ্য খুঁজে পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১ সাল শেষে ইউনিয়ন ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, বিতরণ করা এ ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। অথচ ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকটি খেলাপি দেখিয়েছে ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকটি পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারেন, রাজধানীর পান্থপথ, গুলশান, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জসহ প্রায় ৪০টি শাখার মাধ্যমে অর্থ বের করে নেওয়া হয়। এসব ঋণের যথাযথ নথিপত্রও ব্যাংকের কাছে নেই। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের পরিদর্শনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেগুলো শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
১০ বছর আগে কার্যক্রম শুরু করা ব্যাংকটি এখন ইসলামি ধারার ব্যাংক। যাত্রার শুরুতে ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী আহসানুল আলম।