সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ ইস্যুতে আজ ইসির বৈঠক

সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ ইস্যুতে আজ ইসির বৈঠক

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে পাঠানো খসড়া প্রতিবেদনের তথ্য ধরেই কাজ শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইসির কমিশন বৈঠকে সীমানা পুনঃনির্ধারণের কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে বৈঠকের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পাওয়া জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যমান জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইসি সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ শুরু করছে। এটাকে ভিত্তি ধরে মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচনা করা হবে। এরই মধ্যে জেলাভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাবও প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। তাই চূড়ান্ত জনশুমারি প্রকাশ না হলেও এসব ধরেই সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা বিবিএস থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হয়তো জুনের আগে পাবেন না। তবে না পেলেও যে খসড়া প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তা থেকে ৪-৫ শতাংশ এদিক-সেদিক হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে সমস্যা হবার কথা নয়। সেটা দিয়েই আমরা কাজ শুরু করছি।

জানা গেছে, প্রশাসনিক এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হবে। সেই অনুযায়ী জাতীয় সংসদের হাতে গোনা কয়েকটি আসনের এলাকা পরিবর্তন হতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে গেলে নানা ধরনের প্রশাসনিক অসুবিধা সৃষ্টি হবে। তাই সীমানা পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতার বিষয়টি এবার সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সোমবার পর্যন্ত সীমানা পুনঃনির্ধারণ চেয়ে ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেটসহ বিভিন্ন মহল থেকেই আবেদন জমা পড়ছে। অনেকেই বর্তমান সীমানা বহাল রাখার আবেদন করেছেন। আবার কেউ কেউ আগের সীমানা বহাল রাখার আবেদনও জানিয়েছেন। তবে মৌখিকভাবে তদবির করলেও এমপিদের কেউ এখনও লিখিত আবেদন করেননি।

এরমধ্যে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের সীমানা নিয়ে পাঁচটি আবেদন জমা পড়েছে। একটিতে বিদ্যমান কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনঃনির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের বিদ্যমান সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায় পুনঃনির্ধারণ চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারণ, বিদ্যমান কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) এবং কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস) উপজেলার পরিবর্তে সংসদীয় আসনের পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে নির্বাচনি এলাকা পুনঃনির্ধারণের আবেদনও পড়েছে ইসিতে।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ-১ ও ৫ আসন নিয়েও আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ের (বেলকুচি ও কামারখন্দ) ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এরপর দাবি, আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত করা হবে সংসদীয় আসনের সীমানা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর মহোদয়ের সভাপতিত্বে “সীমানা পুনঃনির্ধারণ, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রস্তুতি এবং উপকারভোগী পর্যায়ে আলোচনা বিষয়ক কমিটি” গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত বছরের ২৪ মে, ২৮ আগস্ট এবং ২৫ সেপ্টেম্বর সভা করে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর যেসব প্রশাসনিক এলাকা সৃজন, বিয়োজন, সংকোচন করা হয়েছে তার তথ্যাদি জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের থেকে সংগ্রহ করা হয়। এবং পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডভিত্তিক জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিইজিআইএস কর্তৃক প্রেরিত Updating GIS Based Constituency Boundary Delimitation Tool for the Upcoming 12th Parliament Election for Bangladesh Election Commission (BEC) , Development of Web GIS based Election Management Platform (EMP) শীর্ষক প্রস্তাবের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এবং ফিন্যান্সিয়াল প্রপোজাল যাচাই বাছাই করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আবেদন আহ্বান করিনি। তারপরও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দরখাস্ত দিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা যোগাযোগ করছেন। দুই রকম দরখাস্তই আসছে আমাদের কাছে। আমরা আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও পাইনি। তবে আমরা অপেক্ষা করতে পারবো না। কেননা জুনের মধ্যে আমরা সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করবো।