আইন শক্তিশালী হলেই বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে

আইন শক্তিশালী হলেই বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তামাকবিরোধী আইনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই সেটি করা সম্ভব।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস সামনে রেখে এমনটাই মনে করছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ প্রতিপাদ্যে।

বিকল্প খাদ্য, ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান’ -প্রজ্ঞা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,

তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের দিবসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। আইন শক্তিশালী হলেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ি ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে।

তামাক চাষের ক্ষতি আড়াল করতে কোম্পানিগুলো তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচিকে (সিএসআর) প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানান প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

“তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি খসড়া সংশোধনী কেবিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খসড়াটি যত দ্রুত চূড়ান্ত হবে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ ততই ত্বরান্বিত হবে, বলেন তিনি।

পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ৪০ লাখ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ-২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৬০০ দশমিক ২৪ একর। এসব জমিতে তামাকের পরিবর্তে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন বোরো এবং ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন গম বা ৮ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৭ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব।

২০২১ রবি মৌসুমে বোরো, গম এবং আলুর একরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৮১ কেজি, ১ হাজার ৩৩৫ কেজি এবং ৮ হাজার ৫৩৮ কেজি।

জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ এবং নানাবিধ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে উল্লেখ করে প্রজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এরকম পরিস্থিতিতে তামাকের মত একটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী ফসল উৎপাদনের বিপরীতে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য হারানোর ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, তামাকপণ্য ব্যবহারের দিক থেকে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম। দেশের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন।

তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি-২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *