রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরবে আজ, রেইনবো নেশন’ (রংধনু জাতি) প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি

রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা  তুলে ধরবে আজ, রেইনবো নেশন’ (রংধনু জাতি) প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি

আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সব মত ও পথের সমন্বয়ে ‘রেইনবো নেশন’ (রংধনু জাতি) প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে রাষ্ট্রকাঠামো ও সংবিধানের সার্বিক সংস্কারে ২৭ দফা রূপরেখা তৈরি করেছে দলটি। এরই মধ্যে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনের পর রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কারের এই রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এ রূপরেখা তুলে ধরা হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট নাগরিক, লেখক, সিনিয়র সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার উদ্যোগের পর যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করে বিএনপি। সংলাপগুলোতে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয় নিয়ে একমত পোষণ করেন তারা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং দলসমর্থিত আইনজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় করে। মতবিনিময়কালে বিশিষ্টজনের কাছ থেকে দেশের সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে সে ব্যাপারে বিশিষ্টজনের পরামর্শ নিতে মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এরপর সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রূপরেখার মৌলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে স্থায়ী কমিটি থেকে ঐকমত্য পোষণ করে বলা হয়, সবার মতামতের ভিত্তিতে রেইনবো নেশন গঠনে কাজ করবে বিএনপি।

রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফায় যা থাকছে : সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন, জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, মিডিয়া কমিশন, ন্যায়পাল নিয়োগ, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিচার, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার মূলনীতির ভিত্তিতে ধর্ম পালনে পূর্ণ অধিকার ও পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান, আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি। এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল ও অপ্রয়োজনীয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বন্ধ, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া, দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করা, ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারগুলোকে অধিকার স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের তালিকা প্রণয়ন ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা-কারিকুলামকে প্রাধান্যসহ জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন ও জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিকদের প্রাইস-ইনডেক্স বেজড ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা ও শিশুশ্রম বন্ধ করা এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।