রাজশাহীর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এক দিনে বাড়ল ২৫ টাকা

রাজশাহীর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এক দিনে বাড়ল ২৫ টাকা

রাজশাহী নগরের বিনোদপুর বাজারে আজ রোববার সকালে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসে ‘বড় ধাক্কা’ খেলেন জরিনা বেগম। আগের দিন যে মুরগি তিনি ১৬৫ টাকা কেজি দরে কিনেছিলেন, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। একটি মেসের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে রান্না করে খাওয়ান তিনি। জরিনা বেগম বললেন, ‘বেটা, সবজিটার দামই খালি বাড়েনি, তাই বাজার করা যাচ্ছে।’

যে দামে তিনি শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ করেন, তাতে জরিনার আর পোষাচ্ছে না। তিনি বললেন, মেসের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে খাবার দাম বাড়াতে হবে। আজকে শুধু মুরগিতেই ৯০ টাকা বেশি লাগল।

একই বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান। তাঁকে ২০ অন্তর একবার মেসের বাজার করতে হয়। শেষবার তিনি ১৫০ টাকা কেজি মুরগি কিনেছিলেন। আজকে তাঁকে আরও বাড়তি ৪০ টাকা যোগ করতে হয়েছে। হাবিবুর বলেন, ‘সামনে কী হবে, তা বুঝতে পারছি। তবে কিছুই করার নেই। সবাইকে খেতে হবে।’

বিনোদপুর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মোশরফ হোসেন বললেন, ব্রয়লার মুরগির খামারে অনেক বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাজারে মুরগির সরবরাহও কম। ফলে তাঁদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজারে সবজির দামটাই শুধু অপরিবর্তিত আছে। আজ রোববার সকালে রাজশাহী নগরের মণিচত্বর মাস্টারপাড়া বাজারে

রাজশাহী নগরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে শাকসবজির দাম মোটামুটিভাবে স্থিতিশীলই আছে। একটি সবজির দাম সামান্য বাড়লে অন্যটি কমে। নগরের বিনোদপুর, কাজলা, নিউমার্কেট ও সবচেয়ে বড় মণিচত্বর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি, বেগুন ২০, গাজর ২০, টমেটো ১০ থেকে ২০, সিম ২৫, পেঁপে ২৫, শসা ৩০ থেকে ৩৫, পালন শাক ১৫ থেকে ২০ আঁটি, কাঁচা মরিচ একটু বাড়তি দামে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম গত সপ্তাহেও প্রায়ই একই ছিল।

বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী শাহিনুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম এখনো ক্রেতার নাগালের মধ্যেই আছে। অনেকেই মাছ, মাংস কম কিনে সবজি বেশি খাচ্ছে। নগরের মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন, সবজির দাম কত দিন নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা যাচ্ছে না। এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিন পর থেকে দাম বেড়ে চড়া হয়ে যেতে পারে।

এদিকে গত দুই দিন ধরে ডিমের দামও বাড়তির দিকে। আগের ৪০ টাকা হালির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা দরে। সাদা ডিম ২ টাকা বেড়ে ৪০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে।
মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের পাশে এক মুদিদোকানে কথা হচ্ছিল আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি রাজশাহী নগরে ভাড়ায় অটোরিকশা চালান। রাজশাহীর চারঘাটে বাড়ি ছিল। পরিবারসহ থাকেন রাজশাহী নগরে। সব জিনিষপত্রের দাম তাঁর প্রায় মুখস্ত। তিনি বললেন, ‘এই সরকার প্রতিদিন বলেই যাচ্ছে মানুষ প্রতিদিন মাছ, মাংস খাচ্ছে। কিন্তু আমি তো বেটা ওদিকে ভয়ে যাইতেই পারি না। মাঝেমধ্যে মুরগি খাই, সেটাও দামও বেড়ে গেছে। সামনে আর তো কোনো সুখবর নাই।’

পাশেই চালের দোকানে গিয়ে জানা গেল, ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে চালের দাম বাড়েনি। বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গুটি স্বর্ণা চাল। এর দাম সবচেয়ে কম ৫০ টাকা কেজি। এরপরই মানুষ কিনে আটাশ চাল। ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই চাল। ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, চালের দাম বাড়েনি। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চাউলের দাম বাড়ার আশঙ্কা তাঁরা করছেন।

এদিকে ভোর থেকে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের ট্রাকের চালের জন্য সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে জড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। নগরের বিনোদপুর এলাকায় ভোর থেকে বসেছিলেন অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন নারী ও পুরুষ। এদের একজন ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ টাকা দর কেজিতে তাঁর চাল কিনতে পারেন। তিনি আজকে ভোর সাড়ে ৬টায় এসেছেন লাইনে আগে দাঁড়ানোর জন্য। টিসিবির ট্রাক ১০টার পর আসে। একই এলাকায় টিসিবি ট্রাকের জন্য মৌসুমী আক্তার অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বলেন, আগে না এসে লাইনে দাঁড়ালে চাল পাওয়া যায় না। এ কারণে সকালেই এসেছেন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে শক্ত হাতে মনিটর করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আজকে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজি দরে। এখন তাহলে খামারি কত টাকা পাচ্ছে? এই জিনিসটা সরকারকে মনিটর করে বের করে বাজারে অভিযান চালাতে হবে।