রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা ৫০ তালগাছে বিষ প্রয়োগকারী সেই আ.লীগ নেতাকে তলব

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা ৫০ তালগাছে বিষ প্রয়োগকারী সেই আ.লীগ নেতাকে তলব

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের হাট বাইগাছা এলাকায় নিজের লাগানো আমগাছ রক্ষার জন্য সড়কের অর্ধশত তালগাছ কীটনাশক প্রয়োগ করে মেরে ফেলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহরিয়ার আলম।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

‘৫০ তালগাছে কীটনাশক’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। 

আদেশে আদালত বলেন, খবরের উল্লিখিত ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা— সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্যে অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিচ্ছি।

৫০টি তালগাছ মেরে ফেলতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কেন শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

আদেশে আদালত বলেছেন, বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করবেন। তারা উল্লিখিত গাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবেন।

প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদেশের কপি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে বলেছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টেলিফোন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠাতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়টি বাগমারা ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তাকে টেলিফোন ও তারবার্তার মাধ্যমে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, ১২ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ইউএনওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহরিয়ারের কাছে যেন পৌঁছে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও করখণ্ড দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাহরিয়ার আলম সম্প্রতি হাটগাঙ্গোপাড়া-ভবানীগঞ্জ রোডের হাট বাইগাছা এলাকায় সড়ক ঘেঁষে ২৭ বিঘা জমিতে একটি দীঘি খনন করেন। ওই দীঘির পাড়ে তিনি বিভিন্ন জাতের কিছু আমগাছের চারা রোপণ করেন। শাহরিয়ার আলমের লাগানো আমগাছের পাশেই আগে থেকে লাগানো সারিবদ্ধ তালগাছ ছিল। প্রায় একযুগ আগে তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন এবং স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি হাট বাইগাছায় সড়কের উভয় পাশে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক তালগাছ লাগিয়েছিলেন। 

স্থানীয়রা জানান, তালগাছগুলোর ছায়ার কারণে শাহরিয়ার আলমের লাগানো আমগাছগুলো বড় হয়ে উঠতে সমস্যা হচ্ছিল। এ কারণে শাহরিয়ার আলম তার নিজের লাগানো আমগাছগুলো দ্রুত বড় করে তোলার জন্য প্রথমে তালগাছগুলোর বাকল কেটে দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করেন। এর পর সেই ক্ষতস্থানে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এতে তালগাছগুলো বর্তমানে শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করেছে। 

নিজের লাগানো আমগাছ রক্ষার জন্য নিজেই এ কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন শাহরিয়ার আলম। 

এদিকে শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদের একজন ব্যক্তি এবং পেশায় তিনি শিক্ষকও বটে। কাজেই একজন শিক্ষক হিসেবে তার এ কাজ করা মোটেই ঠিক হয়নি।