নিকটাত্মীয়ের রক্ত নিলে ঝুঁকি থাকে!

নিকটাত্মীয়ের রক্ত নিলে ঝুঁকি থাকে!

রক্তের প্রয়োজন হলে অনেকে ভাইবোন বা নিকটাত্মীয় খোঁজেন। কিন্তু নিকটাত্মীয় অর্থাৎ মা–বাবা, সন্তান, ভাইবোনের রক্ত নিলে একধরনের গুরুতর প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘ট্রান্সফিউশন অ্যাসোসিয়েটেড গ্রাফট ভার্সাস হোস্ট ডিজিজ’। যদিও এই রোগ খুব বিরল, কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি ৯০ শতাংশ।

কেন হয়?

এই রোগে সাধারণত রক্তদাতা ও রক্তগ্রহীতার রক্তকণিকার ম্যাচিং বিন্যাস (এইচএলএ) এমন হয় যে গ্রহীতার রক্তের প্রতিরক্ষা প্রদানকারী কোষের কাছে রক্তদাতার কোষগুলোকে নিজের বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু দাতার রক্তের প্রতিরক্ষা প্রদানকারী কোষের কাছে গ্রহীতার কোষগুলো শত্রু প্রতিপন্ন হয়। দাতার এই কোষগুলো গ্রহীতার শরীরে প্রবেশের পর সংখ্যা বৃদ্ধি করে গ্রহীতার কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।

রোগের বৈশিষ্ট্য

নিকটাত্মীয়ের রক্ত গ্রহণের দুই দিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে গ্রহীতার এই রোগ হতে পারে, যার ফলে ফুসকুড়ি, জ্বর বা ডায়রিয়া হয়। শরীরের ভেতরেও কিছু পরিবর্তন হতে পারে, যেমন যকৃৎ বড় হয়ে যেতে পারে, কমে যেত পারে রক্তের কোষ (লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা)। এই রোগে পুরুষের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। বয়স্ক কিংবা হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচার হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। যাদের ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয়ের রক্তের সম্পূর্ণ অংশ (হোল ব্লাড) গ্রহণ করা হয়, তাদেরও ঝুঁকি বেশি।

রক্ত নেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন

ঝুঁকি এড়াতে নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণে বিরত থাকতে হবে। তবে একান্তই যদি নিকটাত্মীয়ের রক্ত নিতে হয়, তাহলে রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে বিশেষ প্রযুক্তির (ইরেডিয়েশন) মাধ্যমে সেই রক্তের প্রতিরক্ষা প্রদানকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে নিতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের সুযোগ অপ্রতুল বলে যে কারও রক্তের প্রয়োজন হলে একই ব্লাড গ্রুপের অনাত্মীয় আর নিরাপদ রক্ত খোঁজাই সর্বোত্তম।

ডা. জেসমিন সুলতানা: জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *