বিএনপির কর্মসূচির মোকাবিলা করতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই থাকছে আওয়ামী লীগ

বিএনপির কর্মসূচির মোকাবিলা করতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই থাকছে আওয়ামী লীগ

বিএনপির কর্মসূচির দিন তাদের মোকাবিলা করতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই থাকছে আওয়ামী লীগ। আগামীতেও তারা এ ধারা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করেছে। তাদের এসব কর্মসূচিতে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের দেখা মিলছে না। দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচি পালন করলেও আওয়ামী লীগ জোট শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কোনো আলোচনাও করেনি।

তবে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। তাদের ঐক্য অটুট আছে। ভবিষ্যতে জোটের শরিকদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। এদিকে আন্দোলন বা অন্য নানা ইস্যুতে আলোচনা না করায় ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও শরিক দলের নেতারা বলছেন, তারা বিএনপির আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রয়োজন পড়লে বা প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানালে তারা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবেই মাঠের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার যে কোনো পাঁয়তারার বিষয়ে আমরা সজাগ ও সতর্ক আছি। তারা দেশ, মানুষ ও অর্থনীতির যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক। আমরা আমাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছি।

আওয়ামী লীগের আন্দোলনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আছে। ১৪ দল আদর্শদিক জোট। জোটের শরিকরা যার যার অবস্থানে আছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি একটা সাম্প্রদায়িক দল। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা হচ্ছে, সেটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে ব্যাহত করতে তারা সব সময় অপচেষ্টা করেছে এবং করবে। তিনি আরও বলেন, তবে ২০১৩, ১৪ বা ১৫ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে না। জনগণই এগুলো প্রতিহত করবে। আওয়ামী লীগও নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

গত বছরের শেষের দিক থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। তাদের সব কর্মসূচির দিন নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগও। পাড়া-মহল্লা এবং প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় ছিল দলের নেতাকর্মীরা। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সেভাবে মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি। বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে দূরে থেকেই ক্ষমতাসীনরা এসব কর্মসূচি পালন করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি-এগুলো তাদের পালটাপালটি কর্মসূচি নয়। আন্দোলন বা কর্মসূচির নামে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য তারা সতর্ক পাহারায় থাকেন।

এবার সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিতে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে ৪ দিনের বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কর্মসূচির দিনগুলোতেও বিএনপিকে ফাঁকা মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যেদিন বিএনপির কর্মসূচি থাকবে সেদিনই আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ যুগান্তরকে বলেন, ১৯ মে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আমরা (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ) শান্তি সমাবেশ করব। এছাড়া ২৮ মেও আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি যেন আন্দোলনের নামে কোনো নৈরাজ্য করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্র্মীদের সতর্ক হয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচন হবে। ১৪ দল আদর্শিক জোট। যখন সময় হবে তখন আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোটগতভাবে বিষয়গুলো মোকাবিলা করব।

গণতন্ত্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা নির্বাচনের পক্ষে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হোক। তবে সংবিধান মোতাবেকই সবকিছুর ফয়সালা হতে হবে। শরিক দলগুলো নিজেদের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করছে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সঙ্গে নানা কর্মসূচি নিয়ে শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। বিএনপির কর্মসূচির দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথ বা একক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এসব সংগঠন।

জানতে চাইলে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো আন্দোলন মোকাবিলায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা স্বেচ্ছাসেবক লীগ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। যে কোনো অশুভ পাঁয়তারা বা চক্রান্তকে আমরা প্রতিহত করব। আমরা এ ব্যাপারে প্রস্তুত। একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *