বাংলাদেশকে ঋণ দিতে নিরাপদ মনে করে আইএমএফ

বাংলাদেশকে ঋণ দিতে নিরাপদ মনে করে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণের চেয়ে প্রায় পৌনে চারগুণ বেশি অর্থ জমা রেখেছে বাংলাদেশ। ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি ঋণ সহায়তা পেতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণে এসব অর্থ জমা রেখেছে। আইএমএফের সাধারণ সম্পদ হিসাব বা জেনারেল রিসোর্সেস অ্যাকাউন্ট (জিআরএ) কোটায় বাংলাদেশের জমা ১৬৫ কোটি ডলার। এর বিপরীতে ঋণের বকেয়া স্থিতি মাত্র ৪৫ কোটি ডলার। এছাড়া বর্তমানে ঋণের কোটার চেয়েও বকেয়ার স্থিতি কম। বর্তমান কোটা ১৩৭ কোটি ডলার। কোটা ও জমার চেয়ে বকেয়ার স্থিতি কম হওয়ায় বাংলাদেশকে ঋণ দিতে নিরাপদ মনে করে আইএমএফ।

বৈশ্বিক মন্দা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ প্রভাব মোকাবিলা করতে গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। আইএমএফ সদস্য দেশের কোটা ও জমার মধ্যে সমন্বয় করে সাধারণত চারগুণ ঋণ দিয়ে থাকে। এ হিসাবে বাংলাদেশ ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণ পেতে পারে। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন ঢাকা সফর করছে। বুধবার থেকে মিশনের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত। ইতোমধ্যে তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সাইড লাইনে তারা বেসরকারি খাতের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

সূত্র জানায়, আইএমএফের সদস্য দেশগুলোকে তাদের সাধারণ সম্পদের হিসাব বা জেনারেল রিসোর্সেস অ্যাকাউন্টে (জিআরএ) বৈদেশিক মুদ্রায় একটি অংশ জমা রাখতে হয়। এই জমার বিপরীতে আইএমএফ ঋণের কোটা নির্ধারণ করে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রিজার্ভ থেকে আইএমএফের হিসাবে জমা অর্থ ও জিডিপির আকারের ওপর ভিত্তি করে তারা ঋণের কোটা নির্ধারণ করে। রিজার্ভ ও জমা অর্থ বেশি থাকলে ঋণের কোটাও বেশি হয়। এদিক থেকে বাংলাদেশের জমা অর্থের পরিমাণ বেশি। এর তুলনায় ঋণের বকেয়া স্থিতি বেশ কম।

৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আইএমএফের জেনারেল রিসোর্সেস অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশের জমা ১৬৫ কোটি ডলার। এগুলো বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রায় রাখা আছে। এর মধ্যে স্বর্ণ (ডিম্যাট বা যে কোনো সময় বিক্রিযোগ্য) রাখা আছে ৭০ লাখ ৫১ হাজার ডলার। আইএমএফের কাছে জমা অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেরই অংশ। ফলে ওই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবের সঙ্গেই রয়েছে। ঋণের কোটা হচ্ছে ১৩৭ কোটি ডলার। ওই সময় পর্যন্ত বকেয়া ঋণের কিস্তি বাবদ রয়েছে ৪৬ কোটি ডলার। দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে এসব ঋণ শোধ করতে হবে নামমাত্র সুদে।

বাংলাদেশের বকেয়া ঋণের পুরোটাই দ্রুত অর্থায়ন উপকরণ বা রেপিড ফাইন্যান্সিং ইনস্ট্র–মেন্টের (আরএফআই) আওতায় নেওয়া। এবার আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তা ও টেকসই উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে। দুটি খাত থেকেই বাংলাদেশ ঋণ পেতে পারে।

আইএমএফের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, উন্নত দেশগুলো তাদের কাছ থেকে কেউ ঋণ নেয় না। তবে তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি অংশ জমা রাখে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোই বেশি ঋণ নেয়। জিম্বাবুয়ে বড় ধরনের আর্থিক সংকট মোকাবিলা করলেও বর্তমানে তাদের কাছে আইএমএফের কোনো ঋণ নেই। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্য নয়টি দেশের মধ্যে চারটি দেশে আইএমএফের বকেয়া ঋণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও শ্রীলংকা। বাকি দেশগুলোর কোনো বকেয়া ঋণ নেই। এগুলো হচ্ছে-ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, ইরান ও নেপাল।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আইএমএফে ভুটানের কোটা ২ কোটি ৬২ লাখ ডলার, এর বিপরীতে জমা ২ কোটি ৪ লাখ ডলার। ভারতের কোটা ১ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার, এর বিপরীতে জমা ১ হাজার ২০৬ কোটি ডলার। মালদ্বীপের কোটা ২ কোটি ৭২ লাখ ডলার, এর বিপরীতে জমা ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। মিয়ানমারের কোটা ৬৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার, জমা ১১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। ঋণের বকেয়া কিস্তি ৪৪ কোটি ডলার।

বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে। শ্রীলংকার সঙ্গে আইএমএফের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই তারা একটি বহুপক্ষীয় চুক্তিতে উপনীত হবে। এতে আইএমএফসহ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থাকবে। শ্রীলংকার ঋণের কোটা ৭৪ কোটি ২১ লাখ ডলার। বকেয়া ঋণ ১১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। নেপালের কোটা ২০ কোটি ১২ লাখ ডলার। পাকিস্তানের কোটা ২৬০ কোটি ডলার। বকেয়া ঋণ ৬৯৩ কোটি ডলার।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ঋণ দিতে আইএমএফ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কোটা ২৫৮ কোটি ডলার। বকেয়া ঋণ ৯৬২ কোটি ডলার।