বসন্ত-ভালোবাসার উত্তাপ বাজারে, সপ্তাহে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

বসন্ত-ভালোবাসার উত্তাপ বাজারে, সপ্তাহে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে যশোরের গদখালি ফুলের বাজার জমজমাট। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক দিনেই গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে অন্তত এক কোটি টাকার গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় এদিন রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। 

জানা গেছে, দিবস দুটি ঘিরে এই অঞ্চলের চাষিরা গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। তারা বলছেন, এবার গোলাপের পাইকারি দামে রেকর্ড ভেঙেছে। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও রজনীগন্ধা ফুলের দামও চড়া। এবার চড়া মূল্যে ফুল বিক্রি করতে পেরে গেল দুই বছরের করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী।  

রোববার ভোরে গদখালী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুব ভোরে কেউ বাই সাইকেলে-মোটরসাইকেলে, কেউ বা ভ্যানে করে নানান জাতের ফুল নিয়ে গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে হাজির হচ্ছেন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়। সাতটা নাগাদ হাট জমজমাট হয়ে উঠে। 

উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা ফুল কিনতে এ বাজারে আসেন। ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে গোটা প্রাঙ্গণ। ফুল কিনে ব্যবসায়ী বাসের ছাদে, ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু ও পিকআপে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। ১০ টার মধ্যে হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। দিবস দুটির আগে রোববার ছিল সবচেয়ে বড় হাট। এই হাটে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে গোলাপ চাষি। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উৎসবে গদখালীর গোলাপ সারাদেশে সৌরভ ছড়াবে। 

গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, একদিনেই গদখালী বাজার ও গোলাপের ক্ষেত থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। অন্তত ৫০০ ফুলচাষি গোলাপ ফুল নিয়ে আজ মোকামে আসেন।

সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষি আব্দুর কাদের বলেন, ৩০ বছর ধরে নানান জাতের ফুল চাষ করেছি। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছি গোলাপ। সেই প্রথম থেকেই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপ কোনো বার ১৫ টাকার বেশি পাইকারি দাম পায়নি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত গোলাপ বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এই দামে সব কৃষকই লাভবান হবে। 

গদখালি এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া। ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি। 

সালাম হোসেন নামে এক চাষি বলেন, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উপলক্ষে সবচেয়ে গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা বেশি। তরুণীরা চুলের খোপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। এ জন্যে জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের চাহিদাও রয়েছে। 

স্থানীয় ফুলের ব্যাপারী আল আমিন বলেন, ২৫ টাকা দরে প্রতিটি গোলাপ (ক্যাপ ছাড়া) বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ক্যাপসহ গোলাপ বিক্রি করছেন ১৫ টাকা দরে। পাঁচদিন আগে গোলাপের পাইকারি দাম ছিল প্রায় অর্ধেক। আগামী আরও দুইদিন এমন চড়া দাম থাকবে।’ এছাড়া জারবেরা প্রতিটা ১০ থেকে ১৫, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বেচা-বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাদা ফুল প্রতি হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গত পাঁচ দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত তিন কোটি টাকার গোলাপ ফুল সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আজ অন্তত কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১০ লাখ গোলাপ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দিবস দুটি ঘিরে এই অঞ্চলের চাষিরা গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছে। রেকর্ড দামে গোলাপ বিক্রি করতে পেরে খুশি এই অঞ্চলের গোলাপ চাষিরা। বিগত কয়েকটি দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবে চাষিরা।

উল্লেখ্য, যশোর জেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২০০ থেকে ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। এ অঞ্চলের ছয় হাজার চাষি ফুল উৎপাদন করে। সারাদেশের চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ করা হয়।