জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির হাইকোর্টের নির্দেশ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি সুপারিশ করবে কোন পর্যায়ে কোন স্তারের পাঠ্যসূচিতে ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত হবে। চার বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

ওইদিন শুনানিতে আদালত অভিমত দেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে নিয়ে আসা উচিত। বর্তমান প্রজন্মকে এ ভাষণ শোনানো উচিত। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ওই নির্দেশ দিয়ে বুধবার রিট নিষ্পত্তি করে রায় দেওয়া হয়। রায়ে বিষয়টি চলমান তদারকিতে থাকবে জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে বিবাদীদের সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী বশির আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও তাহিরুল ইসলাম। অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন আদালত। তবে সেটি এসএসসি, এইচএসসি না উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তার জন্য একটি কমিটি করতে বলেছেন। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তা নির্ধারণ করতে বলেছেন।’ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। এখন এটা কোন পর্যায়ে হবে, কীভাবে হবে, সেটা একটা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্ধারণ করে দেবে। সরকার কমিটি গঠন করে দিলে এতে সংযোজন-বিয়োজন করে আদালত চূড়ান্ত করবে। পরে রিটেন (লিখিত) জাজমেন্টে যে সময়সীমা দিবেন, সে অনুযায়ী তা করা হবে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ কোটি বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। ভাষণে তিনি ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে। বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্যদলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসাবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করেছে ইউনেস্কো।