পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত ভোলার বাসিন্দারা

পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত ভোলার বাসিন্দারা

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত দক্ষিণের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলার বাসিন্দারা। এখনও তাদের নৌযান নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরাসরি কোনো সড়কপথ না থাকায় নৌযানে বরিশালে এসে যেতে হয় গন্তব্যে।

যদিও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কয়েক বছর আগে বরিশাল-ভোলা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দাতা দেশ নির্ধারিত না হওয়ায় সেতু নির্মাণ প্রকল্প থমকে আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশাল-ভোলা সেতু নির্মিত হলে পদ্মা সেতুর যথার্থ সুফল পাবেন জেলে, কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। ভোলায় প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। ৬টি কূপ থেকে প্রতিদিন ১২০ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। আরও তিনটি কূপ খননের জায়গা নির্ধারিত হয়েছে। বর্তমানে ৪টি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টসহ বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৭০ এমএমসিএফ গ্যাস। এখানে সার কারখানাসহ মাঝারি শিল্পকারখানা স্থাপনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদিত পণ্য পদ্মা সেতু হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পরিবহণ করা যাবে।

এই জেলায় প্রতিবছর উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টন ইলিশ, শত কোটি টাকার তরমুজ, শসা ও ক্যাপসিক্যাম। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মিত হলে জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সহজেই এসব পণ্য পরিবহণ করতে পারবেন। জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর সেতু মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম সরেজমিন সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পর্যবেক্ষণ করে।

১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুর একাংশে লাহারহাট থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার ও অন্যদিকে শ্রীপুরের পূর্ব পাড় থেকে ভেদুরীয়া ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য স্থান পর্যবেক্ষণ করে টিম। পরে সেতু সচিব মো. বেলায়েত হোসেন জানিয়েছিলেন ২০২৫ সালের মধ্যে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ হবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট ড. দীপংকর চ্যাটার্জির নেতৃত্বে একটি টিম সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতাও পরীক্ষা করে। কিন্তু এরপর আর এগোয়নি প্রকল্পের কাজ।

ভোলা নাগরিক কমিটির সহসভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর দুলাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতুই আমাদের ভোলা-বরিশালের সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এ সেতু নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের ২১ জেলার মধ্যে অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।

ভোলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল, ভোলা ও লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৫ কিলোমিটার সড়ক ৩৩ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশাল চরকাউয়া থেকে লাহারহাট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার, ভেদুরীয়া লঞ্চঘাট থেকে ভোলা সদর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার ও মজুচৌধুরীর হাট থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতু নির্মাণ হলে এর সুফল মিলবে।

ভোলার জেলা প্রশাসক ম. তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী জানান, বরিশাল-ভোলা সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতু হলে দ্বীপ জেলা ভোলায় সড়ক যোগাযোগে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, বরিশাল-ভোলা সেতু নির্মাণ প্রকল্প থমকে নেই। হয়তো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ চলমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা ধীরে এগোচ্ছে। তবে কাজ চলছে। যেহেতু আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে, সেহেতু এই সেতুও নির্মাণ হবে।