পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা বায়েজিদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত

পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা বায়েজিদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত

পদ্মা সেতুর রেলিং থেকে নাট খুলে নেয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামি বায়েজিদ তালহার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে আসামিপক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামসুল আলম।

এর আগে সাত দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল বায়েজিদ তালহাকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে বায়েজিদের সাত দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জামিন শুনানি হয়। কিন্তু আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। উচ্চ আদালতে (জেলা জজ) মিস পিটিশন করার কথাও জানান এ আইনজীবী।  এর আগে ২৭ জুন মামলার আসামি বায়েজিদ তালহার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন শরীয়তপুরের আদালত।

২৬ জুন তাকে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানায়, পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলা ওই যুবকের নাম বায়েজিদ তালহা। তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। তিনি রাজধানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
আটকের পর সোমবার (২৭ জুন) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, পদ্মা সেতুর নাট হাত দিয়ে খোলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি, এত বড় একটা স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলা যাবে না। এটি একটি অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ ঘটনায় গ্রেফতার যুবক বায়েজিদ তালহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন সে পদ্মা সেতুর নাট খুলছে তা জানার চেষ্টা চলছে। আটক বায়েজিদ একসময় পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদ‌লের কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। ত‌বে অনেক দিন ধ‌রে পটুয়াখালী‌তে থাকেন না তিনি। বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। বায়েজিদের বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল-হেলাল নয়ন গণমাধ্যমকে জানান, বায়েজিদ আগে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি অনেক দিন ধরে এলাকায় থাকেন না। এখন ঢাকায় রাজনীতি ক‌রেন কি না তা জানি না। স্বেচ্ছাসেবক দ‌লের এক সিনিয়র বড় ভাইয়ের সঙ্গে বায়েজিদ মিছিল-মি‌টিংয়ে অংশ নিতেন। ত‌বে কোনো পদে ছিলেন না।
উল্লেখ্য, কাইসার ৭১ (Kaisar71) নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্টের লোগো লাগানো সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলার ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক পদ্মা সেতুর কংক্রিটের রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লোহার রেলিংয়ের দুটি নাট খুলছেন। এই নাট দুটি দিয়ে লোহার রেলিংটি আটকানো রয়েছে কংক্রিটের রেলিংয়ের সঙ্গে। এরপর সেই যুবক নাট দুটি বাঁহাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুলে ডান হাতে নেন এবং আবার বাঁহাতের ওপর রাখেন।

নাট দুটি খুলে হাতের ওপর রেখে বলেন, ‘এই হলো আমাদের পদ্মা সেতু। আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু।’ এ সময় পাশ থেকে আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘নাট খুলে ভাইরাল করে দিয়েন না।’

ভিডিওটি বায়েজিদের টিকটক অ্যাকউন্টে আপলোড করার পর ফেসবুকেও সেটি ভাইরাল হয়। তবে রোববার বিকেলে এই অ্যাকাউন্টে ‘প্রাইভেট’ করা অবস্থায় দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। ওই যুবকের এমন কাণ্ড দেখে তার শাস্তি দাবি করেন অনেকেই।