পটুয়াখালীর এক ছাত্রলীগ নেতার পা কেটে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ

পটুয়াখালীর এক ছাত্রলীগ নেতার পা কেটে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এক ছাত্রলীগ নেতার জিহ্বার পা কেটে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সংসদ-সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন হুমকির শিকার ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হোসেন। ডায়েরিতে সাবেক সংসদ-সদস্য মাহবুবসহ মোট দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তিনি। কলাপাড়ার একটি স্লুইস গেট আটকে মাছ ধরা বাণিজ্যের ভাগাভাগি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টিকে অবশ্য অন্যভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাহবুবুর রহমান তালুকদার। অভিযোগকারী হাসিবুল হাসানকে ভাইয়ের ছেলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আজেবাজে লোকের সঙ্গে মিশে সে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে। এজন্য তাকে শাসন করেছি। বিষয়টি একান্তই পারিবারিক। একটি মহল এ বিষয়টিকে ঘিরে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।

২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভাইরাল হয় মোবাইল ফোনে হাসিবুল হাসানকে হুমকি দেওয়ার অডিও রেকর্ড। ওইদিনই বিষয়টি সম্পর্কে কলাপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন হাসিবুল। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ০১৭৩৬৩৯১৬৮৯ নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোনে একটি ফোন আসে। রিসিভ করলে অপর প্রান্তে থাকা লেমুপাড়া বালিয়াতলীর বাসিন্দা কামাল তালুকদার বলেন, সাবেক এমপি মহোদয় কথা বলবেন। এরপর মাহবুব তালুকদার ফোনে আমায় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। লেমুপাড়া স্লুইস গেটের মাছের ব্যবসা নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে আমার জিহ্বা এবং পা কেটে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। আমি এতটাই হতবাক হয়ে যাই যে তার কথার কোনো উত্তর দিতে পারিনি। ফোনে কেবল আমাকেই নয়, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের বর্তমান এমপি মো. মুহিববুর রহমানকেও গালাগাল করেন তিনি। এমপি সাহেব কতদিন আমায় শেল্টার দেন, তা দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন ফোনে।’ এক প্রশ্নের জবাবে হাসিবুল বলেন, ‘আমি বহুদিন ধরেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসন্ন সম্মেলনে আমি কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী। বর্তমান এমপি মুহিববুর রহমানের অনুসারী হিসাবে কাজ করছি। মূলত এ কারণেই তিনি (মাহবুব তালুকদার) আমার ওপর ক্ষিপ্ত। দলে টানতে না পেরে এভাবে হুমকি দিলেন।

কলাপাড়ার বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেড়শর বেশি স্লুইস গেট ঘিরে সেখানে চলে অবৈধ মাছ শিকারের রমরমা বাণিজ্য। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এসব স্লুইস গেটের প্রবেশমুখ জাল দিয়ে আটকে খুলে দেওয়া হয় গেট। খাল বা জলাধারের পানি বের হয়ে যাওয়ার সময় জালে আটকা পড়া মাছ বিক্রি করে চলে টাকার ভাগাভাগি। স্লুইস গেট থেকে শুরু করে খাল বা জলাধার সরকারি সম্পত্তি হলেও মাছ ধরা, বিক্রি, ভাগাভাগির এসব প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ কিংবা অনুমোদন থাকে না প্রশাসনের। সব সময় ক্ষমতাসীনরাই নিয়ন্ত্রণ করে বিষয়টি। স্লুইস গেটের এই দখল নিয়ে কলাপাড়ায় প্রায়ই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের মধ্যে ঘটে সংঘর্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে এসব বিরোধে জড়াচ্ছেন সাবেক এমপি মাহবুব তালুকদার এবং বর্তমান এমপি মুহিববুর রহমানের লোকজন। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান এমপির অনুসারী হাসিবুল হাসানকে এই হুমকি দেওয়া হয় বলে মনে করছেন সবাই।

হুমকি দেওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কলাপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিমউদ্দিন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করা হয়েছে। এটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবিরকে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে অভিযোগের সত্যাসত্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেব আমরা। অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘এটা তো সামান্য একটা ব্যাপার। হাসিবুল আমার আপন খালাতো ভাইয়ের ছেলে। ছাত্রলীগ করে। অসৎ সঙ্গে মিশে সে ইদানীং বখে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারির নানা অভিযোগও আসছে আমার কাছে। এটা একদিকে যেমন আমার জন্য অসম্মানজনক, তেমনই দলের জন্যও ক্ষতিকর। এই কারণে তাকে শাসন করেছি আমি। আমার ভাইয়ের ছেলেকে শাসন করা নিয়ে রাজনীতি হবে কেন?’ থানায় সাধারণ ডায়েরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটাও তার অসৎ সঙ্গের ফল। তাকে কুপরামর্শ দিয়ে এটি করানো হয়েছে। পারিবারিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।’