ক্যান্সারের লক্ষণ বোঝার ১১ উপায়

২০১৫ সালের তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪০ লাখ। শুধু তাই নয়, বছর বছর এই সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই তো চিকিৎসকেরা মনে করছেন এমনভাবে যদি এই মারণ রোগের প্রকোপ বাড়ে, তাহলে ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে একজন করে ক্যান্সার রোগী থাকবেন। এখন প্রশ্ন হল ক্যান্সার রোগ যখন মহামারির আকার ধরণ করতে চলেছে, তখন নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের বাঁচাবেন কীভাবে সে সম্পর্কে ভেবেছেন কিছু? সেজন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, দুঃখ করার চেয়ে নিজেকে সুস্থ রাখাই দরকার বেশি। তাই শরীরে কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে, বিশেষত উদ্বেগজনক কোনো উপসর্গ বোঝা গেলে, অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ বোঝার ওপায় কী? স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট দিয়েছে ১১টি লক্ষণ। এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে ঘাবড়ে না গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে রোগী ও স্বজনদের।

# দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি: আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়। তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন অথবা দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসাসেবা নিন।

# আকস্মিক ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন হারাতে থাকেন, তবে ভাবনার কারণ আছে। অনেক ক্যান্সারই সাধারণত হুট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সবসময়।

# দীর্ঘদিনের ব্যথা: দৃশ্যত কোনো কারণ (যেমন জখম-আঘাত) ছাড়া যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো স্থানে ব্যথায় ভোগেন, তবে তাতে ওষুধও কাজ না করলে এ নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। শরীরের কোন জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে রোগী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নাকি ডিম্বাশয়, পায়ুপথ বা মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত।

# অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড: আপনি যদি শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছুরই লক্ষণ, যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক মনে হলেও পর্যবেক্ষণ করুন, এরপর অন্তত চিকিৎসককে জানান।

# ঘন ঘন জ্বর: ক্যান্সার শরীরে জেঁকে বসলে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। দুর্ভাবনার ব্যাপার হলো, কিছু ক্যান্সারের শেষ পর্যায়েরই উপসর্গ ঘন ঘন জ্বর। তবে ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ এ ধরনের কিছু ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়েই ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয় শরীরে।

# ত্বকে পরিবর্তন: অনেকেই ত্বকের ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এমন ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। তাই ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা ফ্রিকেল অথবা আঁচিলের দিকে খেয়াল করুন। যদি এর রং, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ফস্কুড়ি পড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণও অন্যান্য ক্যান্সারের উপসর্গ।

# দীর্ঘস্থায়ী কাশি: আপনি যদি দেখেন যে ওষুধ সেবনের পরও কাশি সারছেই না, তবে শীতকালীন কাশির চেয়েও এটা বেশি কিছু ধরে নিতে হবে। আর এই কাশির কারণে যদি আপনার বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

# মল-মূত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন: যদি মল বা মূত্রত্যাগের জন্য ঘন ঘন শৌচাগারে যেতে হয়, তবে এখানে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্রত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারের উপসর্গ।

# অকারণে রক্তক্ষরণ: যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারের বড় লক্ষণ। এছাড়া স্ত্রী অঙ্গ (ভ্যাজিনা) বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।

# খাবার গ্রহণে সমস্যা: কেউ খাবার খেলেই যদি নিয়মিত বদহজমে ভোগেন, তবে পেট, কণ্ঠনালী বা গলার ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। অবশ্য সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবু অসুস্থতাকে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই।

# অন্যান্য উপসর্গ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলোকে ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ মনে করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারের। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি।

সবশেষ কথা হলো, ক্যান্সারের অনেক কারণ বোঝাও যায় না, এমনকি অন্য ক্যান্সারের চিকিৎসার পরবর্তী পরিণতি হিসেবে আরেক ক্যান্সার দেখা দেয়। তাই শরীরের যেকোনো অসুস্থতাকেই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স ৩০-৪০ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্যই প্রতি অর্ধবছর বা প্রতিবছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। আশার কথা এই যে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই চিকিৎসা সম্ভব।