করোনার নতুন উপধরন কতটা ভয়াবহ

করোনার নতুন উপধরন কতটা ভয়াবহ

বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগের জানান দিচ্ছে করোনার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ ৭। এটিকে বলা হচ্ছে— অন্যান্য যেকোনও উপধরনের চেয়ে ভয়াবহ। কারণ, তা দ্রুত সংক্রমিত করে এবং তার ইনকিউবেশন পিরিয়ড খুব কম। অর্থাৎ শরীরে প্রবেশের পর তা দ্রুত বিস্তার লাভ ও সংক্রমিত করে। অতীতের কোনও ভ্যারিয়েন্ট এত দ্রুত সংক্রমিত করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানিরা।

চীনে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগী। দিনে আক্রান্ত হচ্ছে কয়েক লাখ। চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা প্রতিদিনের শনাক্তের হার প্রকাশ করবে না। আর  ভারত পাঁচটি দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। আর বাংলাদেশের সব বন্দরে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

নতুন করে বেশ কয়েকটি দেশে কোভিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশের সব বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিং বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব বন্দরে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চীনে চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে অন্তত ২৫ কোটি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। তবে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) হিসাবে উল্লিখিত সময়ে দেশটিতে ৬২ হাজার ৫৯২ জনের করোনার লক্ষণ দেখা গেছে। সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার এনএইচসির বৈঠকে ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে অন্তত ২৫ কোটি মানুষের করোনা শনাক্তের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। চীনে আক্রান্তের হার উদ্বেগ ছড়াচ্ছে দেশটিতেও। ইতোমধ্যে মৃতদেহ সৎকার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় রীতিমতো লাইন লেগেছে।

ভারতেও এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কয়েকজনকে পাওয়া গেছে। মোদি সরকার করোনার  নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) সরকারের জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান ও হংকং থেকে আগত যাত্রীদের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে বা পজিটিভ রিপোর্ট এলে, তাদের কোয়ারান্টিনে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয়।

করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট চারগুণ বেশি দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে। তাই এটিকে বলা হয় আর১৮। অর্থাৎ একজন থেকে ১৮ জন সংক্রমিত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক করেছে। এই উপধরন আসলে সংক্ষিপ্ত ফর্ম। এর পুরো নাম: বিএ ৫২১৭ । এটি ওমিক্রনের বিএ.৫ ভ্যারিয়েন্টের একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। ওমিক্রোনের বিএ.৫ ভ্যারিয়েন্টে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শনাক্ত রিপোর্ট করা হয়েছে, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে, বিএ.৪ এবং বিএ.৫ সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলো ভারতে খুব বেশি ছড়িয়ে পড়েনি।

বিজ্ঞানিদের মতে, করোনা ভাইরাস মিউটেশন করছে এবং মিউটেশন অনেক ভ্যারিয়েন্ট ও সাব-ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে কনভারজেন্ট ইভালিউশন বলা হয়। এই সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলোকে বিএফ৭ এর মতো নাম দেওয়া হয়েছে। ওমিক্রনের অবশিষ্ট রূপগুলো গড়ে ৪ জনকে সংক্রামিত করতে পারে এবং ভ্যারিয়েন্টের ইনকিউবেশন পিরিয়ডও কম। ইনকিউবেশন পিরিয়ড হচ্ছে— ভাইরাসের এক্সপোজার এবং প্রথম লক্ষণগুলোর উপস্থিতির মধ্যকার সময়। অর্থাৎ, যত তাড়াতাড়ি বিএফ৭  এর সংস্পর্শে আসবেন,তত তাড়াতাড়ি সংক্রমিত করবে।

বাংলাদেশে এই ভ্যারিয়েন্ট যেন না প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য সব বন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করতে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সিডিসি। বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিংসহ সন্দেহভাজন যাত্রীকে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করতে বলা হয়েছে। এছাড়া অধিক সংক্রমিত দেশ থেকে আগত  যাত্রীদের পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুযায়ী আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া সংক্রমণ বেড়ে গেলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম  জানান, নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আমরা আবারও আগের মতো প্রচার প্রচারণা শুরু করবো।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এটি ওমিক্রনের একটি উপধরন। যত উপধরন তৈরি হয়েছে— এটি আগের উপধরনের চেয়ে সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি বলেই এটি ছড়াচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখন আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে এবং হাসপাতালে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রোগী হাসপাতালে যায় এবং সেখান থেকেই আগে ছড়ায়।’

ভারতের বিজ্ঞানিরা ধারণা করছেন, ওমিক্রনের এই উপধরন আরেকটি ঢেউ তৈরি করতে পারে। তবে ব্যাপকহারে টিকা দেওয়ার ফলে হয়তো তেমন প্রভাব নাও ফেলতে পারে।