এক দশকে পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে

আজ আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। দেশে করোনাকালে জীবিকার সংকট, অনিশ্চয়তাই বাড়াচ্ছে পুরুষের আত্মহত্যা প্রবণতা।

ঝিনাইদহ জেলায় গত বছর (২০২০) যত জন আত্মহত্যা করেছে, তাদের ৪৭ শতাংশই পুরুষ। গত ১০ বছরে (২০১০–১৯) প্রতিবছর এ জেলায় মোট পুরুষ আত্মহত্যাকারীর হার ৩৬ থেকে ৪৪ শতাংশের মধ্যে থেকেছে। বরাবরই আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি ছিল।

দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলায় আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাকটিভিটিজ (এসওভিএ) দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করছে। এ প্রতিষ্ঠানের জরিপেই আত্মহত্যা–সম্পর্কিত এ তথ্য পাওয়া গেছে।

মানসিক সহায়তা ও আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক হেল্পলাইন ‘কান পেতে রই’–এর উপাত্তে দেখা গেছে, করোনাকালে এখানে পুরুষ কলদাতার সংখ্যা বেড়েছে। আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করে তরুণ শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের মধ্যে কল করার হার বেড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘কাজের মাঝে জাগাই আশা।

এসওভিএর জরিপে দেখা গেছে, ২০১০ সালে ঝিনাইদহে ৩৬৬ জন আত্মহত্যা করেন। তাঁদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ১৩৫, নারী ২৩১। অর্থাৎ ৩৬ শতাংশের বেশি আত্মহত্যা ছিল পুরুষের। পুরুষের আত্মহত্যার এ হার ৪৪ শতাংশ ছিল ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ২০২০ সালে আত্মহত্যার মোট সংখ্যা ছিল ৩২০ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ছিল ১৫১, নারী ১৬৯।

হাসপাতাল ও থানা থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে এসওভিএ। এর প্রধান মো. জাহিদুল ইসলাম  বলেন, ‘হঠাৎ করেই পুরুষ আত্মহত্যাকারী বেড়েছে। এটি শুধু ঝিনাইদহের উপাত্ত। কিন্তু করোনাকালে যে আর্থসামাজিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণে দেশজুড়েই এ পরিস্থিতি হয়েছে বলে ধারণা করতে পারি।

হেল্পলাইন ‘কান পেতে রই’–তে ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ২০ হাজার ৪০৯টি কল আসে। কিন্তু করোনাকালে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত কলের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭৬৪টি। অবশ্য গত বছরের এপ্রিলের আগে এই হেল্পলাইনে দিনে ছয় ঘণ্টা কল করা যেত। গত বছর থেকে তা বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করা হয়। এটাকে কল বেড়ে যাওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করেন ‘কান পেতে রই’–এর চিফ অব অপারেশন্স অরুণ দাস। তবে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে সময় বাড়লেও কল অনেক বেশি হয়েছে, তা বলাই যায়। এ সময় মানুষ ঘরে থেকেছে। তাদের অনেকেই একাকিত্বে ভুগে কল দিয়েছেন।

এই হেল্পলাইনে করোনাকালে পুরুষের কলের সংখ্যা নারীদের চেয়ে বেড়েছে। সাত বছরে অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মোট কলের ৫০ শতাংশের বেশি ছিল নারীদের। আর পুরুষের ছিল ৪৭ শতাংশের বেশি। অপরদিকে করোনাকালে পুরুষের কল ছিল মোট কলের প্রায় ৫০ শতাংশ। আগের সাত বছরে নারীদের কলের মধ্যে ৫৩ শতাংশ ছিল আত্মহত্যার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। করোনাকালে নারীদের এ ধরনের কলের হার ছিল ৫৬ শতাংশ। আর করোনার আগে পুরুষের কলের ৪৬ শতাংশ আত্মহত্যার ইচ্ছা জানিয়ে হলেও করোনাকালে তা ৪৩ শতাংশে নেমে আসে।

অরুণ দাস বলেন, ‘দেখা গেছে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বেশি হলেও এটি সংঘটন বেশি করে পুরুষ।

করোনাকালে পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলালউদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘পুরুষেরা সাধারণত আর্থসামাজিক কারণেই আত্মহত্যা করে। আর নারীরা সাধারণত আবেগগত কারণেই করে থাকে। করোনাকালে সারা বিশ্বে বেড়েছে জীবিকার সংকট, অনিশ্চয়তা। তাই এ কারণেই পেশাজীবী, পুরুষ এবং অপেক্ষাকৃত নবীনদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে বলে ধারণা করা যায়।

‘এই মহামারিকালে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত নিজের মনের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। এর নিজের ইতিবাচক দিক ও সক্ষমতার সন্ধান জরুরি’, পরামর্শ হেলালউদ্দিন আহমেদের।