ইউক্রেনের জ্বালানি ডিপোতে হামলা

ইউক্রেনের জ্বালানি ডিপোতে হামলা

ইউক্রেনের একটি বড় জ্বালানি ডিপোতে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাগর থেকে কালিবির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে চালানো হামলায় ডিপোটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

কিয়েভের কেন্দ্রে অবস্থিত জ্বালানি ডিপোটি থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহ করা হতো। অপরদিকে, একদিনে ২০০ রুশ সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেন বাহিনী। ৯ মের মধ্যে ইউক্রেন অভিযান শেষ করতে রুশ সেনাবাহিনীকে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে বলেও ইউক্রেনের গোয়েন্দারা দাবি করেছে। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, আলজাজিরা ও সিএনএনের।

অভিযানের শুরু থেকে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনায় রুশ বাহিনী হামলা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি আক্রমণ আরও জোরদার করা হয়েছে। খারকিভ, চেরনেহিভ, মারিউপোলের বেশিরভাগ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী।

এছাড়া ইউক্রেনের বাহিনী যেসব জায়গা থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করত সেসব জায়গায়ও হামলা অব্যাহত রাখা হয়েছে। শুক্রবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেনকভ জানান, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভের জ্বালানি ডিপো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এ অভিযানের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে-কবে থামবে এ লড়াই? তবে রাশিয়া ৯ মের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে চায়-ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা দপ্তরের বরাত দিয়ে দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ তথ্য জানিয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়-রুশ সেনাবাহিনীকে মস্কো নির্দেশ দিয়েছে যেভাবে হোক ৯ মের মধ্যে ইউক্রেনকে পরাজিত করতে হবে। তবে প্রশ্ন উঠেছে-যুদ্ধ শেষের জন্য ৯ মে বেছে নেওয়ার কারণ কি? ওইদিন নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করেছিল রাশিয়া। সেই ইতিহাসের মাইলফলককে মাথায় রেখে এবারের যুদ্ধও শেষ করতে চান পুতিন। এজন্য যুদ্ধ শেষ করতে রুশ সেনাবাহিনীকে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার ফেসবুকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়-২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার ২০০ সেনার পাশাপাশি একাধিক হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। ১২টি রুশ ট্যাংক, ২০টি সামরিক যান, তিনটি যুদ্ধবিমান, তিনটি ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। এ দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটার ধারণা-ইউক্রেন অভিযানে এ পর্যন্ত ১৫ হাজারের মতো সেনা হারিয়েছে মস্কো। একইসঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশাল রুশ বাহিনী।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন সীমান্তে পোল্যান্ডের জেসোভ শহর সফর করেছেন। হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়- সফরের দ্বিতীয় ধাপে শুক্রবার পোল্যান্ডে যাচ্ছেন বাইডেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়-ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী জোসোভ শহরে বাইডেনকে স্বাগত জানাবেন পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থতার হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত : যুক্তরাষ্ট্রের দাবি-ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যব্যহারে ব্যর্থতার হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। তিনটি মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আগ্রাসন শুরুর এক মাস পরও রাশিয়া কেন মৌলিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আগ্রাসনের আগে রাশিয়া যেসব মৌলিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে তার মধ্যে ছিল ইউক্রেনের বিমান বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করা। ইউক্রেনের তুলনায় বিশালাকার সামরিক সক্ষমতা থাকার পরও সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি রাশিয়া। তবে এ ধারণার পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থতার হার বেশি হওয়ার কারণও জানানো হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেমলিন অথবা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, পেন্টাগনের হিসাব অনুযায়ী যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ইউক্রেনে অন্তত এক হাজার ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের কি পরিমাণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে আর কতগুলো ব্যর্থ হয়েছে তা জানাননি তারা। এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা তথ্যে দেখা যায়- বিমান থেকে ফেলা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যর্থতার হার ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত, যা দিনের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেছে। রুশ আগ্রাসনে ক্ষেপণাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মস্কোর দাবি ইউক্রেনের অস্ত্র মজুতসহ নানা সামরিক স্থাপনায় এ হামলা চালানো হচ্ছে।