আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস আজ

আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস আজ

জিনগত পরিবর্তন, ভেজাল খাদ্য, বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে শিশুদের ক্যানসার বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিশু।

চিকিৎসার আওতায় আসে মাত্র অর্ধেক শিশু। তাদের ক্যানসারের ধরনভেদে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়। তবে ক্যানসার আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশু ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সারাবিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস-২০২৩। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বেটার সারভাইভাল ইজ অ্যাচিভাবল, থ্রো দেয়ার হ্যান্ডস।’ অর্থাৎ আপনার হাত ধরে ভালোভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব। এর মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্তদের সহযোগিতার দিক তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ৯টায় জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের উদ্যোগে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে সকাল ৯টায় সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালন করবে।

চিকিৎসকরা যুগান্তরকে বলেন, দেশে জিনগত পরিবর্তন ছাড়াও ভেজাল খাদ্য, খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, বায়ুদূষণ ও বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও উন্নয়নে শিশুদের ক্যানসার বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এছাড়া ব্রেন, কিডনি, কোলন, লিভার ও হাড়ের ক্যানসারেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ক্যানসারে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে বৈশ্বিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্তের হার ৬০ ভাগ কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে শিশু ক্যানসার রোগীদের যথাযথ পরিসংখ্যান থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। শিশুদের ক্যানসার শনাক্তের হার বাড়লেও চিকিৎসা সম্প্রসারিত হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও কম। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশে শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মাত্র ৫০ জন। অভিজ্ঞ নার্স ও টেকনিশিয়ান এবং ঢাকার বাইরে শিশু ক্যানসার চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহ মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর যুগান্তরকে বলেন, দেশে প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ হাজার শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে চার থেকে ছয় হাজারের মতো চিকিৎসার আওতায় আসছে। বাকিরা শনাক্তের বাইরে থাকছে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিশুদের জন্য হাসপাতালে বেড রয়েছে মাত্র ৪০টি। গত এক বছরে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ১৩শ-এর বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। ক্যানসারের ধরন ভেদে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শিশু চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়। তবে শিশুদের ক্যানসার হলে অনেকে শুরুতে বুঝতে পারে না। অনেকে বিশ্বাসও করতে চায় না।

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ক্যানসার চিকিৎসায় অবকাঠামোসহ সব ধরনের সংকট রয়েছে। চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম যুগান্তরকে বলেন, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্যানসার তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। মেডিকেল অনকোলোজিস্টের সংখ্যাও কম। তবে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজে শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ পদ তৈরি হয়েছে। কিছু জায়গায় পদায়নও হয়েছে। বিএসএমএমইউতে বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ শিশুর ক্যানসার শনাক্ত হয়ে থাকে। অধিকংশ শিশুরোগীই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা থাকলেও এটি এখনো শহরমুখী। চিকিৎসার বিকেন্দি কীকরণ করা গেলে রোগীর চাপ কমবে। তা ছাড়া ক্যানসার চিকিৎসার মূল প্রতিবন্ধকতা রোগীদের আর্থিক সমস্যা। এতে অনেক রোগী মাঝপথে চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসা ভোগান্তি কমাতে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।