৩ উইকেটে বাংলাদেশকে হারালো অস্ট্রেলিয়া

বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচে ৩ উইকেটের কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের টানা তিন ম্যাচ জয়ের পর বাকি দুই ম্যাচ কার্যত রূপ নেয় অজেয় অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে এসে শনিবার (৭ আগস্ট) খেই হারিয়ে ফেলে টিম টাইগার্স। মাঝে কয়েকবার আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। আর এর মধ্য দিয়ে তিন ম্যাচ পর প্রথম হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। অন্যদিকে, প্রথম জয়ের দেখা পায় ক্যাঙ্গারুবাহিনী।

এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের তোপে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্গ। শুরুতে জশ হ্যাজলউড, মাঝে মিচেল সোয়েপসনের পর শেষদিক অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যান্ড্রু টাইয়ের তোপে ১০৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। তবে স্বল্প পুঁজি নিয়েও বল হাতে এদিনও আশা দেখান মেহেদী হাসান। প্রথম ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন ম্যাথু ওয়েডকে ফেরান এই তরুণ তুর্কি। চার ম্যাচে এ নিয়ে তিনবারই বাংলাদেশকে প্রথম ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন মেহেদী।

এরপরই সাকিবের বলে মিরপুরে ঝড় তুলেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান। এক ওভারে ৫ ছক্কায় সাকিবের ওভারে ক্রিস্টিয়ান তুলেছেন ৩০ রান। এই খরুচে ওভার দিয়ে সাকিব ছুঁলেন নিজের রেকর্ডই। এর আগে ২০১৯ সালে রায়ান বার্ল এ মাঠেই সাকিবের এক ওভারে তুলেছিলেন ৩০ রান। তবে সেবার অবশ্য তিন ছক্কার সঙ্গে হয়েছিল তিনটি চার। ফলে ক্যারিয়ারে এক ওভারে পাঁচটি ছয় সাকিবের ওভারে এল এই প্রথমবার। সাকিবের ওই খরুচে ওভারই বলা যায় অজিদের জয়ের পথ সুগম করে দেয়। যদিও পাঁচ ছক্কার ওভারের পরের দুই ওভারে পড়েছে দুই উইকেট। প্রথমে বেন ম্যাকডারমটকে এলবিডব্লু করেছেন নাসুম আহমেদ। ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ম্যাকডারমট। আউট হওয়ার আগে করেছেন ১২ বলে ৫ রান। পরের ওভারে মুস্তাফিজ এসেই সফল হয়েছেন। ফিরিয়েছেন ড্যান ক্রিস্টিয়ানকেই। জায়গা বানিয়ে টেনে মারতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে ধরা পড়েছেন ১৫ বলে ৩৯ রান করা ক্রিস্টিয়ান।

সাকিবের হাতে রানআউটের শিকার হয়ে ফিরে গেছেন মইজেস হেনরিক্সও। আউট হওয়ার আগে ৯ বলে করেছেন মাত্র ৪ রান। অ্যালেক্স ক্যারিকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। সিমের ওপর হাত ঘুরিয়ে করা স্লোয়ার ঠেকাতে পারেননি অ্যালেক্স ক্যারি। গাজী সোহেলের দেওয়া এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউ করেও লাভ হয়নি ক্যারির। ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ৬৩ রানে ৫ম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। অ্যালেক্স ক্যারির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না মিচেল মার্শও। আউট হওয়ার আগের ওভারে মিচেল মার্শের একটা কট-বিহাইন্ড হয়েছিল কিনা, আল্ট্রা-এজের পর সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সেসব বিতর্কের অপেক্ষা করলেন না মেহেদী। মার্শকে করলেন বোল্ড। অফস্টাম্পে ফুললেংথে পড়া বলটা ঢুকে গেছে মার্শের রক্ষণ ভেদ করে। শেষ ১৮ রানে অস্ট্রেলিয়া হারায় ৫ উইকেট। তবে তারপরই অ্যাশটন অ্যাগার আর টার্নার মিলে দলের হাল ধরেন। তাদের হার না মানা ইনিংসে ভর করে শুরুর চাপ ভালোভাবেই সামাল দেয় তারা। পরে শরিফুলের বলে শামীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে অ্যাগার ব্যক্তিগত ২৭ রানে ফিরলেও জয় আটকানো যায়নি। ৬ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় পায় টিম অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকার আবারও ফেরেন এক অঙ্কেই। ২, ০, ২, ৮- চার ম্যাচে সৌম্য সরকারের স্কোর। টানা তিন ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে রান পায়নি বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশের মিশনে চতুর্থ ম্যাচে শনিবার (৭ আগস্ট) মাঠে নামার আগে তাই পরপর ব্যর্থ সৌম্য সরকার ও নাঈমের একাদশে সুযোগ পাওয়া নিয়েই একপ্রকার সন্দেহ ছিল। তবে এদিন আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ সৌম্য। এরপর টানা তিন উইকেট পতনে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের পর প্রথমে আউট হন সাকিব। প্রথম বলে একটা চার মেরেছিলেন, তবে পরের বলেই সামনে এসে শর্ট বলটা মিস করে আত্মবিশ্বাস যেন আবার নড়বড়ে হয়ে যায় সাকিবের। এরপর জশ হ্যাজলউডের শর্ট বল কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। আগের দুই ম্যাচে সাকিব করেছিলেন ২৬ রান, খেলেছিলেন ১৭টি করে বল। আজ করেন ২৬ বলে মাত্র ১৫ রান।

সাকিবের পরপরই মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নুরুল হাসান সোহানও। এদিন ব্যাট হাতে ব্যর্থ আগের ম্যাচসেরা টিম টাইগার্স কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। একটু বাড়তি গতির ছিল বলটা। সুইপ করতে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ নাগাল পাননি সেটির। মিচেল সোয়েপসনের লেগস্পিনে এলবিডব্লু হয়ে শূন্য রানেই ফিরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। রিভিউ করারও প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। মাহমুদউল্লাহর পর হতাশ করেছেন নুরুল হাসান সোহানও। কোনো রান না করেই আউট হয়ে গেছেন তিনি। সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-সোহানরা যখন ব্যর্থ, তখন একপাশ আগলে রেখেছিলেন শুরুতে নামা মোহাম্মদ নাঈম। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারলেন না তিনিও। ৩৬ বলে ব্যক্তিগত ২৮ রান করে সোয়েপসনের বলে ম্যাথু ওয়েডের কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।   বাংলাদেশের এমন দুর্দিনে ব্যর্থ আফিফও। অ্যাশটন অ্যাগারের প্রথম শিকার হলেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচের নায়ক। ১৭ বলে ২১ রান করেছেন। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ শামীম পাটোয়ারিও। এদিন মাত্র ৩ রানেই আউট হয়ে যান তিনি। শেষ দিকে, মেহেদী হাসানের ২৩ রানের মহামূল্যবান ইনিংসে ভর করে শত রানের কোটা পার হয় বাংলাদেশের। ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ৩টি জিতে ইতিমধ্যেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।