১৫ জুলাই থেকে বিভাগীয় সমাবেশ, মাঠ ছাড়ছে না জামায়াত

১৫ জুলাই থেকে বিভাগীয় সমাবেশ, মাঠ ছাড়ছে না জামায়াত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ তিন দফা দাবিতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসা দলটি এবার বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১৫ জুলাই সিলেট থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে সব সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করবে। দ্বিতীয় ধাপে বড় জেলা শহরে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে দলটি। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে জামায়াত। এজন্য দলটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিভাগে কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, সিলেট শহরের রেজিস্ট্রারি মাঠে প্রথম সমাবেশের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অনুমতি চেয়েছে। এরপর ২২ জুলাই চট্টগ্রাম এবং ২৯ জুলাই কুমিল্লায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে। আগস্টে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর মহানগরে সমাবেশের পর ঢাকায় ফের কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে দ্বিতীয় ধাপে বড় জেলা শহরে সমাবেশ করবে দলটি। এতে মূল দাবির পাশাপাশি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা ও মহানগরের কার্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরবেন নেতারা। জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যুগান্তরকে বলেন, ‘সব সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশ হবে। সিলেট থেকে শুরু হচ্ছে এ কর্মসূচি। অতীতের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। আশা করছি, সমাবেশ করার অনুমতি পাব। দ্বিতীয় ধাপে জেলা সদরে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল। আমরা সব সময় প্রকাশ্যে আসতে চেয়েছি। এসেছিও, কখনো ঝটিকা, কখনো সময় পরিবর্তন করে। সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে বের হতে পারেনি, সেটা ভিন্ন। সুতরাং নির্বাচন সামনে আসছে, এখন ঝুঁকি নিয়ে হলেও প্রকাশ্যে আসতে হবে। আসা শুরু করছি। এখানে ভিন্ন কোনো কারণ নেই। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাছাড়া আমাদের এই প্রকাশ্য ভূমিকাকে জনগণও স্বাগত জানাচ্ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য বলেন, মূলত কর্মসূচির লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থাসহ দশ দফা দাবি সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। দশ দফা হলেও মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ-এ তিন দাবিতে হবে সমাবেশ।

এক দশক পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াত। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির ঘোষণার পর ১৮ দিনের মাথায় জামায়াত ঢাকায় ওই সমাবেশ করে। কিন্তু নির্বাচনের ডামাডোলের আগে হঠাৎ করে দলটির সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে। অনেকের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, এটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত কি না। যদিও জামায়াত বলেছে, তারা ১০ জুনের সমাবেশের ব্যাপারে দৃঢ় ছিল। এ ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির সুযোগ নিয়েছে। সমঝোতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

ঢাকার ওই সমাবেশের পর শুক্রবারও রাজধানীসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে বিশাল শোডাউন করেছে জামায়াতে ইসলামী। সুইডেনের স্টকহোমে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে দলটি। এ কর্মসূচি পালনেও কয়েকটি জেলা ছাড়া সারা দেশের কোথাও বাধার মুখে পড়েনি তারা। সূত্রমতে, আগামী দিনে সমাবেশ কর্মসূচিগুলোর মধ্য দিয়ে আবার স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমের ধারায় ফেরাটাও জামায়াতের অন্যতম লক্ষ্য। এই কর্মসূচিগুলোয় প্রশাসন বাধা দেবে না বলেই নেতারা আশা করেন। তবে বাধা দিলে এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশলে হলেও মাঠে থাকবে জামায়াত।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি রয়েছে জামায়াতের। যেসব আসনে সাংগঠনিক শক্তি বেশি, সেসব আসনে তারা প্রার্থীও ঠিক করছে। তবে আন্দোলনকেই আগে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জামায়াতের সব সময়ই নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে। পরবর্তী ১০ বছরে প্রার্থী কারা হবেন, তা ঠিক করে রাখা হয়। দলের ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির এলাকা আছে। ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরি এলাকার প্রার্থী আগেই ঠিক করা হয়েছে। ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রার্থী এখন ঠিক করা হচ্ছে। সেটা নির্বাচন সামনে রেখে করা হচ্ছে, বিষয়টি তা নয়। এটা দলের একটি প্রক্রিয়ার অংশ। জামায়াতের দুটি বিভাগ রয়েছে-অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বিভাগ ও স্থানীয় জাতীয় নির্বাচন বিভাগ। এর দায়িত্বও আলাদা। তারা এসব কাজ করে থাকে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেন, ‘প্রার্থী ঠিক করা কেবল নিয়মিত কাজেরই একটি অংশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু না। নির্বাচনের তারিখের আগে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *