জাতীয় সঞ্চয়পত্র কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘সরকারি ঋণ বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাশের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নিজের বা কারও পক্ষে সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ইস্যু করা সার্টিফিকেটের স্বত্ব অর্জনের জন্য মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে।
বিলের বিরোধিতা করে বিএনপির সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছেই। তারা কোটি কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু এই ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই বিলটিতে।
তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের নামে দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে- পরিকল্পনামন্ত্রী কিছুদিন আগে নিজেও এ কথা স্বীকার করেছেন। বাস্তবেও তাই হচ্ছে। সরকার একের পর এক মেগা প্রকল্প নিচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন সময় বাড়ে, ব্যয়ও বাড়ছে। এরসঙ্গে লুটপাট, দুর্নীতি ও অর্থপাচার তো আছেই।
একই দলের সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ঋণখেলাপি, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই বিলের ফলে তা আরও বাড়বে। কারণ বিলটিতে এসব প্রতিরোধের কোনো উপায় বলা হয়নি।
জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বিলটির বিরোধিতা করে বলেন, অর্থনৈতিক খাতে শৃঙ্খলা নেই। কীভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে তা বিলে বলা হয়নি। অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা না থাকলে একটি দেশ পঙ্গু হয়ে যায়। তিনি বলেন, সরকার ঋণ নিচ্ছে। যাকে খুশি ঋণ দিচ্ছে। যারা আলাদাভাবে, পেছনের দরজা দিয়ে ম্যানেজ করতে পারে, তারা সহজেই ঋণ পাচ্ছে। আর যারা সহজ পথে ঋণ নিতে চেষ্টা করছে তারা ঋণ পাচ্ছে না। এই হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী বিলে তা বলা হয়নি।
একই দলের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই বিলে ঋণ নেওয়া অবাধ দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ-সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, সরকারের অতিমাত্রায় ঋণ নেওয়ার নির্ভরশীলতা একসময় বুমেরাং হবে।
একই দলের সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, এই বিলটি আরও অধিকতর যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। এ বিষয়ে মানুষের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
টেকসই ঋণ নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র তৈরি, ঋণের ঝুঁকি নিরূপন এবং সরকারের দায়ের হিসাবকে আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে নতুন আইনে ৪০টি ধারা রয়েছে। ‘সরকারি ঋণ বিল-২০২১’ এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মিথ্যা তথ্য সম্পর্কিত সংঘটিত অপরাধ আমলে নিতে পারবে না।