(রাবি) শিক্ষার্থীকে হল কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন, হিন্দু ছাত্রকে শিবির বলে হত্যার হুমকি

(রাবি) শিক্ষার্থীকে হল কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন, হিন্দু ছাত্রকে শিবির বলে হত্যার হুমকি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রাবাস কক্ষে আটকে রেখে এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের পাশাপাশি ওই হিন্দু শিক্ষার্থীকে শিবির বলে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এমন দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।

সোহরাওয়ার্দী হলের দ্বিতীয় ব্লকের ৩৮৩ নম্বর রুমে থাকেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়। রোববার রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলামের ৭-৮ জন কর্মী কৃষ্ণ রায়ের রুমে গিয়ে তাকে রুম থেকে বের হয়ে আসতে বলে। বের হতে রাজি না হওয়ায় তার বিছানাপত্র তুলে ফেলে দিয়ে তারা অন্য বিছানা তুলে দেয়। এরপর নাইমের রুমে নিয়ে কৃষ্ণকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতনের সঙ্গে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান ও কয়েকজন কর্মী জড়িত।

ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায় বলেন, রাতে পড়াশোনা করার সময় হঠাৎ আমার রুমে ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে আমার বেড ফেলে দেয় এবং আমাকে রুম থেকে বের হতে বলে। বের না হলে সোলায়মান নামে একভাই আমাকে এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় দেওয়া শুরু করেন। আমি ভিডিও করতে চাইলে তিনি আমার ফোন কেড়ে নেন। এরপর জোর করে আমাকে নাইম ভাইয়ের রুমে নিয়ে যান এবং তার সামনে আমাকে কান ধরিয়ে উঠবস করান। আমাকে শিবির বলে প্রচার করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আমি হিন্দু জানার পর বলে, ‘তোকে এখন মেরে ফেললেও কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।’ কৃষ্ণ আরও বলেন, আমার সঙ্গে থাকা সহপাঠী মাহবুব বিল্লাহের ফোনও তারা কেড়ে নেন। মাহবুব বলেন, ধস্তাধস্তি করতে দেখে আমি ছুটে যাই। ওই রুমে ঢুকলে তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। রুম থেকে আমাকে বের করে দেয়। আধঘণ্টা পর ফোন ফিরিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে নাইম ইসলাম বলেন, আমার রুমে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে ওই কক্ষে একটা সিটের জন্য আমার কর্মীরা গিয়েছিল। সেখানে কথা কাটাকাটি হয়েছে। কোনো মারধর করা হয়নি। বিষয়টির সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। আরেক অভিযুক্ত সোলায়মান বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি ওই ছেলের পাশের কক্ষে থাকি। সেদিন ওর কক্ষে যাওয়ার পর সে ভিডিও করা শুরু করেছিল। পরে ওই ছেলের বিভাগের সিনিয়রদের সম্মুখে ভিডিও ডিলিট করিয়েছি। এরপর ঘটনাটির সমাধান হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সেখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি এবং ওই ছেলে তার সিটেই রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাইনি। ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।