দাম বাড়ার ঘোষণার পরপরই রাজশাহীতে রান্নার জন্য ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশকরা বলছেন, তারা তিন থেকে চার দিন ধরে চাহিদা মাফিক সিলিন্ডার সরবরাহ পাচ্ছেন না। সিলিন্ডার নেওয়ার জন্য গাড়ি পাঠাচ্ছেন কোম্পানির গুদামে কিন্তু গাড়ি আসছে না।
এদিকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় রাজশাহীতে সিলিন্ডারের দামও বেড়ে গেছে। এক হাজার ৪৯৮ টাকার সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৫৫০ টাকা করে। নগরীর বাইরের গ্রাম মহল্লা ও জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকা করে। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। যদিও ক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার দাম বাড়ানোর দুদিন আগে থেকেই রাজশাহীতে বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রি শুরু করেন পরিবেশকরা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে দাম বাড়ানোর দুদিন আগে বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করায় বৃহস্পতিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ দপ্তর রাজশাহীর ছয়জন পরিবেশককে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করেন। এরপর থেকেই রাজশাহীতে সিলিন্ডার সংকটের কথা বলছেন পরিবেশকরা।
এদিকে নগরের গৌরহাঙ্গা এলাকার গ্যাস সিলিন্ডার পরিবেশক মেসার্স আনন্দ কুমার সাহার ব্যবস্থাপক সজীব বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ওমেরা কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে। গত চার দিন আগেই সিলিন্ডার আনতে গাড়ি পাঠানো হয়েছে কিন্তু গাড়ি ফিরে আসেনি সিলিন্ডার নিয়ে। অনেক সময় কোম্পানি নিজেরাও সরবরাহ দেয়। তাও দেওয়া হয়নি। তাদের গুদামে এখন গ্যাস সিলিন্ডার মজুত নেই। ফলে খুচরা ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের তারা দিতে পারছেন না। কয়েকজন গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী জানান, এরই মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রির অভিযোগে তাদের ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে গেছে। অন্য পরিবেশকদেরও জরিমানা করা হয়। এভাবে চলতে থাকলে তারা আর সিলিন্ডার ব্যবসা করতে পারবেন না। ঘন ঘন দাম বাড়ানো হচ্ছে। তারা তো কম দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারেন না।
যমুনা ও লাভ কোম্পানির গ্যাসের রাজশাহীর পরিবেশক মেসার্স হালিমা এজেন্সির ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম বলেন, তাদের প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। তারা দু’দিন পরপর একটি করে গাড়ি পাঠিয়ে সিলিন্ডার আনিয়ে থাকেন। এক গাড়িতে ৬১৬টি সিলিন্ডার আসে। এখন তাদের বলা হচ্ছে, সংকটের কারণে তিন থেকে চার দিন পরপর গাড়িতে ২০০ করে সিলিন্ডার দেওয়া হবে। সরবরাহ সংকটের কারণে এখন তারা গ্রাহককে চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। অনেক গ্রাহক ফিরে যাচ্ছেন সিলিন্ডার না পেয়ে।
পরিবেশক অগ্নি এন্টারপ্রাইজের মালিক শামীমা সুলতানা বলেন, প্রতি মাসে তাদের দুই হাজার গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা আছে। তাদের ৯০০ থেকে এক হাজার গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তাদের খুব ভোগান্তি হয়েছে। একটি সিলিন্ডার থেকে মাত্র আট থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। এখন একসঙ্গে এক সিলিন্ডারের ওপর ২৬৬ টাকা দাম বাড়ালে লাভ যোগ করার আর জায়গা থাকছে না। এভাবে এতবার দাম বাড়ানোর কারণে গ্রাহকরা ভীষণ কষ্টে পড়েছেন।
এদিকে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডারপ্রতি দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা করে বাড়ানোর ফলে রাজশাহীতে সিলিন্ডার বিক্রি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। রাজশাহীতে শনিবার বিভিন্ন এজেন্সিতে এক সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৪৯৮ টাকায়। তবে গ্রাহক পর্যায়ে আরও ১০০ টাকা নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। নগরীর সাগরপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, এভাবে প্রতি মাসে সিলিন্ডারের দাম এত টাকা করে বাড়ানোর ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান শেখ বলেন, দাম বাড়ানোর পর প্রতি সিলিন্ডারে ২৬৬ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। আবার খুচরা ব্যবসায়ীরা বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও ১০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। ক’দিন ধরে আবার সিলিন্ডারই পাওয়া যাচ্ছে না। এ সুযোগে কেউ কেউ এক হাজার ৫৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।