বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদের খোঁজ পেলে বড় জরিমানা

বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদের খোঁজ পেলে বড় জরিমানা

রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রিটার্ন জমা সহজ করতে আয়কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা কমিয়ে জাতীয় সংসদে ‘আয়কর বিল-২০২৩’ পাশ হয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো করদাতা যদি তার রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করেন, আর সেই সম্পদের খোঁজ যদি কর কর্মকর্তারা পান এবং ওই সম্পদ অর্জনের উৎস ও অন্যান্য বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে জরিমানা দিতে হবে। বিদেশে থাকা সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায়ও করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

বিলে করবর্ষের শেষ তারিখে ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে, বছরের কোনো সময়ে চিকিৎসা বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ ভ্রমণ করলে সম্পদ ও দায়ের বিবরণী জমা দেওয়া (রিটার্ন) বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে।

রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাশের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলের বিরোধিতা করে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, কাজী ফিরোজ রশীদ এবং স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাশ হয়।

পুরাতন আয়কর অধ্যাদেশে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কর রেয়াত সুবিধা ছিল। নতুন আইনের ষষ্ঠ তফশিলে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত অংশে সরকারি সিকিউরিটিজের কথা উল্লেখ থাকলেও সঞ্চয়পত্র বাদ পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনে সিকিউরিটিজের সংজ্ঞায় সংশোধনের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ও ডিবেঞ্চারকে যুক্ত করা হয়েছে। নতুন আইনের অধীনে সঞ্চয়পত্র ও ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যাবে।

এছাড়া গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় কালোটাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় কালোটাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাট কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। প্রস্তাবিত বিলে এটি ৫ হাজার টাকা ছিল। এ ছাড়া জেলা সদরের পৌরসভা এলাকার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে কর ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ছোট কোম্পানির রিটার্ন জমার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলের ৭৩ ধারায় বলা হয়েছিল, ২ কোটি টাকার বেশি টার্নওভারধারী কোম্পানি, ফার্ম, ব্যক্তিসংঘাতে রিটার্নের সঙ্গে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দ্বারা প্রত্যায়িত আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। এই সীমা বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, বিধায় ছোট কোম্পানিগুলোর কর পরিপালনের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।

এছাড়া পুরাতন আইনে প্রায়ই এনবিআর বছরের যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে করহার পরিবর্তন করতে পারত। নতুন আইনে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে করারোপ বা করহার বৃদ্ধি করা যাবে না-এই শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, যাদের একাধিক গাড়ি আছে তাদের বিপুল পরিমাণে কর দিতে হবে।

আইনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ স্থায়ী করা হচ্ছে। এতে কালোটাকা আয় করতে মানুষ উৎসাহী হবে। একই দলের আরেক সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বিদেশিদের যারা ডোনেশন দেন তারা সেখানে আয়কর দিয়ে চ্যারিটির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেখানে করারোপ করা হলে এনজিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি অভিযোগ করেন, এই আইনের মাধ্যমে এনবিআরকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন কোনটা ধর্মীয় আর কোনটা দাতব্য তা ঠিক করার সামর্থ্য কি এনবিআরের আছে?

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, কর আদায়ের পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করতে খরচ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর এতে দেড় লাখ কোটি টাকা কর আদায় বাড়বে। কিন্তু এটি করা হচ্ছে না। এই টাকাটা ঘুসে চলে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ঘুস ছাড়া এনবিআরে কোনো ফাইল চলে না। এনবিআরই ডিজিটালাইজেশনে বাধা। আয়কর বিলের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আয়কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এ বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এ বিল পাশ হলে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *