শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীরা পড়ার চাপে পড়ছেন। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার পরীক্ষা হলেও এসব শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাইয়ে। ফলে দীর্ঘ সময়জুড়ে তাদের কোচিং করতে হবে। যার খরচের বোঝা পড়বে অভিভাবকদের ঘাড়ে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, উচ্চশিক্ষার ভর্তির সঙ্গে সমন্বয় না করে শুধু এইচএসসি পরীক্ষা আগে আগে নিয়ে কী লাভ?
অভিভাবকরা জানান, একজন শিক্ষার্থী দুই বছরের পাঠ পরিকল্পনা নিয়েই তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ভর্তির প্রক্রিয়া এবং ক্লাস শুরু না করে শুধু পরীক্ষা এগিয়ে এনে করোনার সময়ের ঘাটতি সময় পূরণ করা যাবে না। বরং এতে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে না পারলে ভালো ফলাফলও তারা করতে পারবে না। এতে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়বে। পড়ালেখায় তাদের অনাগ্রহ কিংবা ছেদও পড়তে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভিন্নমত। তারা বলছেন, করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের মতো পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এখন পরীক্ষা শুরুর সময় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক সময়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীরে ক্লাস বন্ধ ছিল। সে কারণে শিক্ষাপঞ্জিতে এলোমেলো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতিও দূর হচ্ছে না।
গত বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হয়েছিল গত বছরের ২ মার্চ থেকে। এসব শিক্ষার্থীই এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বসবেন। এবার পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা হলেও প্রশ্নপত্রের ধরন হবে আগের মতোই। করোনার সময় যেমন বেশি প্রশ্নপত্র থেকে কম প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল, এবার সেই সুবিধা নেই। মানে পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস হলেও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হবে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। শিক্ষা বোর্ড-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের কেউ কেউ চেয়েছিলেন এ বছরের সেপ্টেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে। যাতে পরীক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমে এবং পাঠ্যসূচি ভালোভাবে শেষ করা যায়। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা পরীক্ষা আগে আগে নেয়ার পক্ষে মত দেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বাভাবিক সময়েও উচ্চমাধ্যমিকে ১৮ মাসের বেশি ক্লাস হয় না। তখন পাঠ্যসূচি থাকে পূর্ণাঙ্গ। এবার হয়তো ১৫ মাসে পরীক্ষা হচ্ছে। এবার কিন্তু পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস করা, মানে পুরো পাঠ্যসূচি নয়। করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন অনেক দেরিতে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। তাই পরীক্ষার সময় ধীরে ধীরে আগের সময়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের জুলাইয়ের ৮ থেকে ১০ তারিখের দিকে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি করলে পরীক্ষার্থীদের খুব অসুবিধা হবে না বলে তিনি মনে করেন।