মাসে ১ হাজার টাকা জমা করলেই ষাটোর্ধ্ব বয়সে প্রতি মাসে মিলবে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। আনুমানিক এমন সুবিধা রেখে এক বছরের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে চায় সরকার। শুরুতে স্বেচ্ছাধীন থাকলেও, ধীরে ধীরে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে স্কিমটি। বুধবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পেনশন স্কিমের সার্বিক ধারণা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, সবাইকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। তারা মাসিক চাঁদা দেবেন, সরকারও কিছু অংশ দেবে। এখান থেকে যে তহবিল গঠিত হবে, সেই তহবিল লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হবে। ওই বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয় পেনশনভোগীদের লভ্যাংশ হারে দেয়া হবে।
একটা বয়সের পর মানুষ স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়, অনেকের থাকে না নিজস্ব আর্থিক সুরক্ষা। নিম্ন আয়ের মানুষের শেষ বয়সের দুর্ভোগ থাকে চরমে। এছাড়া বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় বার্ধক্যে পরনির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা আগামী তিন দশকে বাড়বে ৩ গুণের বেশি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং সক্ষমতা বিবেচনায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে সরকার। যেখানে আপাতত সরকারি/সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়া সকল কর্মক্ষম নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। সেটি প্রধনমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেসব অন্তর্ভূক্ত করে দ্রুতই সর্বজনীন পেনশন আইন প্রণণয়ন করা হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, আমাদের বর্তমান গড় আয়ু ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে এটি বেড়ে হবে ৮০ বছর, ৬৫ সালে হবে ৮৫ বছর। এতে দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি অবসরের পরও ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচবেন।
আনুমানিক হিসাবে ১৮ বছর বয়সী কেউ মাসে ১০০০ টাকা চাঁদা দিয়ে স্কিম চালু রাখলে ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা পাবেন। তুলনামূলক বেশি বয়সে স্কিম চালুতে আনুপাতিকহারে কমবে পেনশন সুবিধা।
নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের পেনশন স্কিমের মাসিক চাঁদার একটি অংশ অনুদান হিসেবে সরকার দিবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ ফান্ডে জমাকৃত টাকা নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিতে বিনিয়োগ করবে।
পেনশনের অর্থ এককালীন উত্তোলন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। পেনশনের টাকা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। পেনশনের টাকা নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করা হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ এই টাকা বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করবে।