এদেশে উগ্র-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এদেশে উগ্র-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘এ দেশে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। আমরা ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নই। এ কারণেই সিরিয়া-ইরাকের মতো হয়নি বাংলাদেশ।’

কোনো সময়ই ইসলাম জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিহাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে, তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

বোরবার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে  এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটি প্রতিহত করা হয়েছে। ‘আইএস নামক সংগঠনের নামে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ এবং জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমরা জঙ্গিবাদকে দমন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়।

‘ইসলামে উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একসাথে বসবাস করি। বাংলাদেশে উগ্রবাদ জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম অগ্নিসন্ত্রাস, গাড়িতে বাসাবাড়িতে আগুন।  যখনই আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করলাম, তখনই শুরু হলো জঙ্গিবাদের নতুন অধ্যায়। আমরা দেখলাম ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যা করা হলো। রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যা, পঞ্চগড়ে ইসকন মন্দিরের পুরোহিত, বান্দরবানের বৌদ্ধমন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা করা হলো। শিয়া মসজিদে হামলা হলো। মসজিদে বোমা ফাটানোর চক্রান্ত হলো।’ এসব ঘটনার পেছনে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা ছিল বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা করা হয়েছে। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলা হয়েছে। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকল। এর মধ্যেই হোলি আর্টিজানের হামলা হলো। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে একটি বড় দেশ বলেছিল, বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ’আমাদের পুলিশ বাহিনী সেদিন জীবন বাজি রেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদতবরণ করেছেন। এখন পাশের দেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীরাও আমাদের প্রশংসা করেন।’

মন্ত্রী আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষবাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নেই। কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতা ও সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, ইসলামকে বর্তমানে একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে পরিচিত করতে ইসরাইলসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। সেখানে মুসলমানদেরই কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণকে জানাতে হবে।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল না হলে আমাদেরও মুক্তি নাই। সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের হুমকি এখনো আছে এবং তা মোকাবিলায় ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ এর মতো বই প্রকাশ করা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে এটিইউর প্রধান বলেন, ‘২০১৭ সালে দেশব্যাপী জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট গঠিত হয়। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আমরা ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ ও অভিযান পরিচালনা করি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা তদন্ত করি। সেই সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়ন ও সাইবার ক্রাইমসহ জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে গিয়ে যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলো করে থাকি। এটিউকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ধর্মের সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রধান ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বইটি ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং  পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এটিইউ প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি কামরুল আহসান সভাপতিত্ব করেন।