ঈদের ছুটির আগে ও পরে ট্রেনের টিকিটের জন্য নতুন নিয়ম করা হয়েছে। এখন এর গ্যাঁড়াকলে পড়ছেন অনেক যাত্রী। এই নিয়ম ৬ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো যাত্রীই নিজের আইডি থেকে একবারের বেশি একমুখী টিকিট কাটতে পারবেন না। যাত্রীদের অভিযোগ, একমুখী নয়, একটি আইডি থেকে কোনোমুখী টিকিটই দুবার কাটা যাচ্ছে না। এ ছাড়া অনেক যাত্রীকে এক ট্রেন থেকে নেমে রুট বদল করে আরেক ট্রেনে উঠতে হয়। সেখানে গিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়ছেন।
বিশেষ করে লোকাল ট্রেনে দিনে দু-তিনবার যাতায়াত করা যাত্রীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, আন্তনগর ট্রেনের জন্য এ নিয়ম করা ঠিক হলেও লোকাল ট্রেনের জন্য তা মোটেই ঠিক হয়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, একজন যাত্রী তাঁর নিজের আইডি থেকে গত ২৪ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত শুধু একবার একমুখী যাত্রার টিকিট কাটার সুযোগ পেয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত আবার একই নিয়ম চালু থাকছে। এতে একজন যাত্রী তাঁর নিজের আইডি থেকে একমুখী টিকিট একবারই কাটতে পারছেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী, সেখান থেকে ফিরতি যাত্রার টিকিট কাটতে পারার কথা। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাঁরা ফেরার টিকিট কাটতে পারছেন না। তবে ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কাটতে পারছেন। আন্তনগর ও লোকাল সব ট্রেনের জন্য এই নিয়ম করায় লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
গতকাল শনিবার সকালে নাটোরের আব্দুলপুর স্টেশন থেকে আহমদ বাবর দুই ছেলে ও স্ত্রীকে সঙ্গে করে পঞ্চগড়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য নিজের আইডি দিয়ে চারটি টিকিট কেটে পার্বতীপুরে যান। সেখান থেকে ট্রেন বদল করে পঞ্চগড়ের ট্রেনে উঠতে হয়। সেখানে নেমে তিনি আর নিজের আইডি দিয়ে পঞ্চগড়ের টিকিট কাটতে পারেননি। এমনকি রোববারের টিকিট কাটার চেষ্টা করেও তিনি পারেননি। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীর আইডি দিয়ে তিনি ফিরতি টিকিট কেটেছিলেন। এ জন্য স্ত্রীর আইডি দিয়েও পঞ্চগড়ের টিকিট কাটতে পারছেন না। এই বিপদে পড়ে তিনি পঞ্চগড়ের যাত্রা বাতিল করে এক দিন আগেই আব্দুলপুরে ফিরে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর আইডি দিয়ে ফেরার টিকিটও কাটা যাচ্ছে না।
একই রকম বিপদে পড়েছেন রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতিবিষয়ক কর্মকর্তা আসাদ সরকার। তিনি বলেন, গত ২৭ জুন তিনি রাজশাহী থেকে নিজের আইডি ব্যবহার করে টিকিট কেটে গাইবান্ধায় যান। শনিবার রাতে তিনি সেখান থেকে রাজশাহীতে আসবেন। কিন্তু নিজের আইডি দিয়ে আর টিকিট কাটতে পারেননি। শেষমেশ নজরুল ইসলাম নামের পরিচিত এক ব্যক্তির আইডি ব্যবহার করে তিনি সান্তাহার পর্যন্ত টিকিট কাটতে পেরেছেন। শনিবার রাত আটটায় গাইবান্ধা থেকে করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে এসেছেন। সান্তাহারে এসে ট্রেন বদল করে রাজশাহীগামী ট্রেনে উঠতে হয়। দ্বিতীয়বার আর ওই আইডি দিয়ে টিকিট কাটতে পারেননি।
রেলওয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, যাত্রীদের সুবিধার জন্য এ বিধান করা হয়েছে, কিন্তু যাত্রীদের একটি আইডি থাকে। দালালদের অনেকগুলো আইডি আছে। তাঁরা তাঁদের ওই সব আইডি ব্যবহার করে টিকিট কেটে নিচ্ছেন। নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়া যাত্রীরা আবার বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। নতুন নিয়মের বিষয়টি সাধারণ যাত্রীরা জানতে পারেননি। কারণ, এটা রেলের টিকিট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। সাধারণ যাত্রীরা সেখানে কমই ঢোকেন। লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের জন্য এই নিয়ম করা একদম ঠিক হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার করে জেনে বলতে পারবেন।